পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৬৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

642 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড লন্ডনের স্বাধীন টলিভিশনে ‘ওয়ার্ল্ড ইন একশন নামক সাপ্তাহিক এক জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে সম্প্রতি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের এক বিবরণ দেয়া হয়েছে। মুক্তিফৌজ নেতা মেজর খালেদ টেলিভিশন রিপোর্টারদের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন-বাংলাদেশে একটি লোকও জীবিত থাকা পর্যন্ত এই সংগ্রাম চলবে বাংলাদেশ থেকে পাকসেনা খতম করে তবে থামব।’ আমেরিকায় ট্রেনিংপ্রাপ্ত জনাব খালেদ গত ১৮ বছর ধরে পাক সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। তিনি বলেছেন, “পাক বাহিনী হেলিকপ্টার এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে আমাদের লোকদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে চাইছে। মেজর খারেদ বলেছেন, “পাক বাহিনী বাঙ্গালী মেয়েদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে এবং তাদের শ্ৰীলতাহানি করছে।’ মেজর খালেদ আরো বলেছেন, “মহান সংস্কৃতির ধারক আমরা। দেশীয় কাব্য ও সাহিত্যের জন্য আমরা গর্বিত। আমরা কোন দিনই হিংসাপরায়ণ ছিলাম না। পাক বাহিনীর অত্যাচারের বদলা নেওয়ার জন্যই আমরা তিনি বলেছেন, বিশ্বাসঘাতকদের আমরা হত্যা করব। বাংলাদেশে আমরা ক্রীড়নক সরকার গঠন করতে দেব না। আমরা ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করছি। নিজের পরিবার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন যে, অন্যান্য বহু পরিবারের ভাগ্যে কি হয়েছে আমি নিজের চোখেই তা দেখেছি। নিজের কথা চিন্তা করার অধিকার এখন আর আমার নেই। বাংলাদেশই আমার পরিবার।" -জয় বাংলা, ২ই জুলাই ১৯৭১ কুমিল্লা শহর অন্ধকার, বহু স্থানে গেরিলা লড়াই ঢাকা, ২রা জুলাই (রয়টার)-ত্রিপুরা সীমান্তের কাছে বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে কার্য জারী করা হয়েছে। রাতে সেখানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এখানে আগত যাত্রীদের কাছে এই খবর জানা গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র উড়িয়ে দেবার ফলে কুমিল্লা শহরে পাঁচ দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। মুক্তিফৌজ ঐ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে উড়িয়ে দিয়েছেন বলে স্থানীয় লোকের ধারণা। সোমবার প্রেঃ ইয়াহিয়া যখন বেতার ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন কুমিল্লায় কয়েকবার বিস্ফোরণরে শব্দ শোনা গেছে। ৪টি প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিমান বন্দর এলাকায় ঐ বিস্ফোরণ হয়েছে বলে প্রকাশ। গত রাত্রেও দশবার বোমা বিস্ফোরণের শব্দ হয়েছে। গেরিলা অভিযান জোরদার মুজিবনগর থেকে পি, টি, আই-র খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের সকল রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজের গেরিলা অভিযান জোরদার হওয়ায় বহু পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়েছে। যশোর এলাকায় ২৮শে জুন মুক্তিফৌজ টহলদারী একদল সৈন্যকে অতর্কিতভাবে আক্রমণ করেন। কয়েকদিন আগে রংপুর এলাকার একটি সীমান্ত ঘাঁটি আক্রমণ করে মুক্তিফৌজ একজন পাক সৈন্যকে খতম এবং কয়েকজনকে আহত করেন।