পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



703

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

  উভয় স্থানেই হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের উপর হামলা করিয়া মুক্তিবাহিনীর তৎপরতার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে।

চট্টগ্রাম

 গত ১২ই সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার উসখাইল গ্রামে মুক্তিবাহিনী এক অভিনব কৌশল করিয়া মুসলিম লীগের একজন কুখ্যাত দালালকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে। আব্দুল হাকিম নাম উক্ত দালালটি ইউনিয়ন কাউন্সিলের এবং কথাকথিত শান্তি কমিটির একজন সদস্য ছিল। গত ১২ই সেপ্টেম্বর উক্ত দালালটির মেয়ের বিবাহের তারিখ স্থির করার অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। মুক্তিবাহিনী বর পক্ষের ছদ্মবেশে মিষ্টির হাঁড়িসহ তাহার বাড়ীতে হাজির হয়। দালালটি বর পক্ষের অভ্যর্থনা করিতে ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিলে মুক্তি সেনাগণ তাহাকে গুলি করিয়া হত্যা করে।

 গত ১৫ই সেপ্টেম্বর মুক্তিবিহিনী সকাল ৮টায় পাটিয়া থানার অন্তর্গত কালার পোল পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমন করিয়া একজন পুলিশ ও একজন রাজাকারকে হত্যা করে। গত ১০ই সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী পটিয়া থানার মালিয়া পাড়া গ্রামে ১১ জন মুসলীম লীগ দালালকে হত্যা করিতে সমর্থ হয়।

কুমিল্লা

 ১০ ই সেপ্টেম্বর হাজীগঞ্জে একটি গেরিলা দলের সঙ্গে পাক বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। গেরিলা বাহিনী পাক হানাদারদের হঠাৎ দুই দিক হইতে আক্রমণ করিয়া বিপর্যস্ত করিয়া দেয় ও আনুমানিক ৩০ জন পাক সৈন্যকে হত্যা করে। গেরিলা বাহিনীর আক্রমণের মুখে পাকা দস্যু বাহিনী টিকিতে না পারিয়া নিহতদের ফেলিয়া পালাইয়া যায়। গেরিলারা হানাদারদের ফেলিয়া যাওয়া প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদ দখল করে।

৭ই সেপ্টেম্বর নবীনগর থানার রাইতলা গ্রামের কাছে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৪ জন পাক দস্য নিহত হয়। দস্যুদের এই দলটি নৌকাযোগে রাইতলা দিয়া যাইতেছিল। এমন সময় মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা উহাদের আক্রমণ করিয়া নিহত করে।

ঢাকা

 ১১ই সেপ্টেম্বর রায়পুরা অঞ্চলে গেরিলা যোদ্ধারা জয়নগরে তিতাস গ্যাস লাইন উড়াইয়া দেয় এবং তিনটি পাওয়ার লাইন ধ্বংস করে। 

-মুক্তিযুদ্ধ, ১০ অক্টোবর, ১৯৭১
* * * * *

মেজর মঞ্জুরের ৯ নং সেক্টর সফর

 সম্প্রতি ৮ নং সেক্টর কমাণ্ডার মেজর মঞ্জর ৯নং সেক্টর সফর করে মুক্তিবাহিনীর কর্মতৎপরতা দেখে মুগ্ধ হন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের বীরত্বে অতি শীঘ্রই বাংলাদেশ থেকে হানাদার বর্বররা বিতাড়িত হবে।

মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ওসমানীর ওণাঙ্গন সফর

 ২রা অক্টোবর, বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল এমএজি ওসমানি পূর্ব রণাঙ্গনের অগ্রবর্তী অঞ্চল, বিভিন্ন হাসপাতাল ও মুক্তিসেনাদের শিবির পরিদর্শন করে বিপুল প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে ৫ দিনব্যাপী সফরের পর আজ মুজিবনগরের মুক্তি বাহিনীর সদর দফতরে ফিরে আসেন। তিনি রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে ভাষণ দেন।