পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



746

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

 পাক জঙ্গী বিমান বিধ্বস্ত: ১৮ই নভেম্বর, চট্টগ্রাম। খবর পাওয়া গেছে মুক্তিযোদ্ধারা কক্সবাজারের নিকট একখানা পাক জঙ্গী বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

 ঘটনার বিবরণে প্রকাশ বাংলাদেশের অসমসাহসী মুক্তিযোদ্ধারা শহরটি দখলের চেষ্টা করলে হানাদাররা বাধা দেয়। ফলে সামনা সামনি তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিবাহিনী প্রচণ্ড মারের মুখে পাক হানাদার টিকতে না পেরে পিছু হটছে তখন এই জঙ্গী বিমানের সাহায্য নেওয়া হয়।

এ বৎসরেই ঢাকায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়বে: কর্নেল ওসমানী

 অতি সম্প্রতি একটি প্রভাবশালী ইংরেজী সাপ্তাহিক পত্রিকার এক সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রধান অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলেন যে, আমাদের মুক্তিবাহিনী এখন এত দ্রুততার সঙ্গে দেশকে মুক্ত করার সংগ্রামে অগ্রসর হচ্ছেন যে, আশা করা যায় এ বৎসর শেষ হওয়ার আগেই ঢাকার বুকে স্বাধীন বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল পতাকা উড্ডীন হবে।

 তিনি বলেন, মুক্তিবাহিনী এখন স্থল, নেী এবং বিমান বহিনী দ্বারা সজ্জিত এবং ইতিমধ্যে নীে বাহিনীর ডুবুরী গেরিলারা অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। এখন বাংলাদেশের টাঙ্গাইল, যশোর, খুলনার সুন্দরবন, নোয়াখালী কুমিল্লা, সিলেট, রংপুর ইত্যাদি অঞ্চলে ২৫,০০ বর্গমাইল এলাকা মুক্তিবাহিনীর অসমসাহসী যোদ্ধারা মুক্ত করেছেন এবং এ সমস্ত অঞ্চলে বেসামরিক শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছে।



-বিল্পবী বাংলাদেশ, ২১ নভেম্বর, ১৯৭১

মুক্তিবাহিনী গেরিলাদের বিরাট কর্ম্মতৎপরতা

 নবিনগর: ঢাকায় প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায় যে, মুক্তিযোদ্ধারা এই থানার বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬০ জন হানাদারকে নিহত এবং দ্বিগুণসংখ্যক হানাদারকে আহত ও বন্দী করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা বাঞ্ছারামপুর গোডাউন থেকে চার হাজার মণ চাউল উদ্ধার করে তা গ্রামবাসীদের মধ্যে বিলিয়ে দেন।

 বিক্রমপুর: বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, ঢাকা জেলার লৌহজং থানাধীন বিক্রমপুর এলাকায় মুক্তিবাহিনীর বীর গেরিলারা পর পর কয়েকটি সংঘর্ষে খান সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রচুর সমরাস্ত্র হস্তগত করেছে। ২০ অক্টোবর তারিখে মাত্র কয়েকজন গেরিলা একটি শত্রবাহী নৌকা অতর্কিতে আক্রমণ করে একজন পাঞ্জাবী সেনা ও দুইজন রাজাকারকে নিহত ও ২ জনকে বন্দী করে পরে কান কেটে ছেড়ে দেয়।

 পরের দিন অপর এক আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে রত ২৮ জন পাকসেনা ও রাজাকারকে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে। তৃতীয় দিবসে দুটি লঞ্চবাহী ৪৬ জন মিলিটারী গ্রামে প্রবেশ করে লুটতরাজ, নারীধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ আরম্ভ করে। এই সময় ওঁৎ পেতে বসে থাকা গেরিলারা সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হয়। সুদীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা মুখোমুখি লড়াই করে গেরিলারা সবকটি খান সেনাকে খতম করে দেয়। এই সংঘর্ষে প্রচুর গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র গেরিলাদের হস্তগত হয়। এই একই থানায় নদীবক্ষে প্রায় একলক্ষ টাকার পাটবাহী একটি নৌকা আমাদের বীর গেরিলারা ডুবিয়ে দেয়।

 মুকুন্দপুর: সংবাদে প্রকাশ আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা অসমসাহসিকতার সহিত এখানে হানাদার পাক দস্যুদের মোকাবিলা করেন। সামনাসামনি সংঘর্ষের পর মুক্তিবাহিনী মুকুন্দপুর দখল করে নিতে সক্ষম হন। পলাতক হানাদার বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি এখনও জানা যায়নি। তবে অনুমান করা যাচ্ছে এখানে কমপক্ষে ৪৫ জন হানাদার পাক সৈন্য নিহত আর ৮ জন জীবন্ত ধরা পড়ে।