পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

284 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড শুরুতে আপনার সৈন্যসংখ্যা কতজন ছিল? তখন নতুনদের প্রশিক্ষণের কি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? প্রথমে ইষ্ট বেমঙ্গল রেজিমেন্ট, বিডিআর, পুলিশ এবং মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহী কিছু ছাত্র-জনতাসহ প্রায় চারশত লোক পেলাম। বর্ডারের ওপারে এবং বাঁশতলায় আমরা ট্রেনিং ক্যাম্প করলাম। ভারত থেকে দু’একজন জেনারেল এসেছিলেন, তারাও কয়েকটি ট্রেনিং ক্যাম্প সংগঠন করলেন। দেশের অভ্যন্তর থেকে যারা ওখানে গিয়েছিলেন তাদের মধ্য থেকে শক্ত সমর্থদের বেছে নিয়ে ট্রেনিং দেয়া হলো। আস্তে আস্তে বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে এই সংখ্যা প্রায় বার হাজারে গিয়ে দাঁড়ালা। সরকার গঠিত হওয়ার পরের কথা বলুন। সরকার গঠিত হওয়ার পর আমাকে সিলেট পাঠানো হলো ৫নং সেক্টরের কমাণ্ডার হিসেবে। এলাকাটি ছিল দুর্গম। গাড়ী চলাচল করতে সুবিধা হতো। সবটাই ছিল হাওর এবং বিল এলাকা। সুনামগঞ্জছাতক এলাকায় হয় নৌকায় নতুবা পায়ে হেঁটে, সাঁতার কেটে এদিক ওদিক চলাচল করতে হতো। এসব জায়গায় সাংবাদিকও তেমন আসতেন না। সরকারের পক্ষ থেকে ও লোকজন তেমন আসতেন না। একবার একজন কর্মকর্তা এসেছিলেন। তিনি হলেন নূরুল কাদের খান, যুদ্ধকালীন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্থাপন সচিব। তিনি শিলং পর্যন্ত এসেছিলেন এবং ওখানেই তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছিল। জেনারেল ওসমানী সাহেব দু’বার এসেছিলেন এবং আমার সাথে রনাঙ্গন পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছিলেন। তিনি পায়ে হেঁটে আমার এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গনসমুহ পরিদর্শন করেছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবও একবার এসে আমাকে দেখে গিয়েছিলেন। তিনিও পায়ে হেঁটে আমার সেক্টরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। সেক্টর বলতে কোন পর্যন্ত বুজাচ্ছেন? বাংলাদেশর ভিতর বাঁশতলা বলে একটি জায়গা আছে। তাজউদ্দীন সাহেব ওখানে এসেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আপনি কোথায় এবং কিভাবে পশিক্ষণ দিয়েছিলেন? বাংলাদেশের ভিতরে আমাদের অনেকগুলি ক্যাম্প ছিল। সেসব ক্যাম্পে আমাদের সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। আবার ভারতের অভ্যন্তরে সীমান্তের কাছাকছি এলাকায়ও কিছু প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল। সেসব ক্যাম্পে ভারতীয় সৈন্যরা প্রশিক্ষণ দিতেন। কাজেই মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণের দুটি উৎস ছিল। একটি ছিল সেটা আমি নিজে সংগঠন করে বাংলাদেশ থেকে এনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতাম। আর একটি ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর মাধ্যমে আমাদের সরকার সরাসরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে মুক্তিযোদ্ধাদের পৃথক পৃথকভাবে আমাদের কাছে পাঠাতেন। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে কমাণ্ডার-ইন-চীফ হিবেবে ঘোষণা করার পর আপনি কিভাবে তার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে গিয়েছিলেন? আগেই বলেছি জেনারেল ওসমানী সাহেবের সাথে সর্বপ্রথম আমার দেখা হয়েছিল রামগড়ে। তবে এর আগেও আয়ারলেসে দু’একবার তাঁর নির্দেশ আমি পেয়েছি মহলছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায়। তখন আমি বড় রকমের একটি যুদ্ধে লিপ্ত ছিলাম। সে সময় তিনি আমাকে রামগড়ে চলে আসতে বলেছিলেন। আমি তাঁকে জানিয়েছিলামঃ পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা আমার দখলে আছে। কাজেই আপনারা কেন পার্বত্য এলাকায় চলে আসছেন না? তিনি পরামর্শ দিলেনঃ এটা ঠিক হবে না। আমরা সবাই মিলে আবার নতুনভাবে সংগঠন করে যুদ্ধ চালিয়ে যাবো। জেনারেল ওসমানী সাহেবের নির্দেশনুযায়ী মহালছড়ির যুদ্ধের পর আমি রামগড়ে চলে