পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
9

করা হয়। ১৪শ ডিভিশনের ৫৭ ব্রিগেড ঢাকায় অবস্থান করছিলো। এই ডিভিশনের অপর ব্রিগেডটি ছিলো উত্তরবঙ্গে।

 পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটা থেকে ১৬শ ডিভিশন চলে আসার পর উত্তর বঙ্গের দায়িত্ব এই ডিভিশন গ্রহন করে। জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হওয়া ছাড়াও এই সকল বাহিনীর সার্বিক কমাণ্ডের দায়িত্বও গ্রহন করেছিলেন। ১১ই এপ্রিল লেঃ জেনারেল এ, এ, কে, নিয়াজী ইস্টার্ন কমাণ্ডের কমাণ্ডার নিযুক্ত হওয়ার পর জেনারেল টিক্কা খান তাঁর এই বাড়তি দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এরপর তিনি শুধু গভর্নর এবং সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে কাজ করেন। পাকিস্তানীদের উল্লিখিত সেনাবাহিনী ছাড়াও পরে আরো দুটি ডিভিশন গড়ে তোলা হয়। এই দুটি পাক ডিভিশনের জন্য বাংলাদেশ বাহিনী এবং এমনকি ভারতীয় বাহিনীতেও পুনর্গঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়। বাংলাদেশ বাহিনীর পুনর্গঠনের সঙ্গে সঙ্গে সকল সেক্টরে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানও অব্যাহত থাকে। আমাদের আক্রমণাত্মক তৎপরতা অক্ষুণ্ণ রাখা এবং লড়াইয়ের উদ্যমকে সমুন্নত রাখাই ছিলো এর উদ্দেশ্য।

অপারেশন জ্যাকপট

 ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৬ই মে বিএসএফের নিকট থেকে বাংলাদেশে সামরিক তৎপরতা চালাবার পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে। এক সপ্তাহ পরে ২৩শে মে তারিখে ভাগিরথী নদীর তীরে একটা গোপন ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করা হয়। এই ক্যাম্পের অবস্থান ছিলো পলাশীর স্মৃতিসৌধের পাশে। এর সাংকেতিক নাম দেয়া হল ক্যাম্প 'সি ২পি'। ক্যাম্পের জন্য লোক সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভারতীয় নৌ-বাহিনীর অফিসাররা বিভিন্ন যুব শিবির সফরে বেরিয়ে পড়েন। আমার ক্যাম্পে আগত নৌ-বাহিনীর অফিসার বললেন, 'আমি কয়েকজন নিপুণ সাঁতারু বাছাই করতে চাই, তাদেরকে তরুণ এবং ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।' জুন মাসের মধ্যে ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবকের প্রথম দলটি বাছাই করে 'সি ২পি' ক্যাম্পে পাঠানো হয়। আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এরা কঠোর এবং শ্রমসাধ্য ট্রেনিং সমাপ্ত করে। পুরো ব্যাপারটাই ছিলো ভারতীয় নৌ-বাহিনীর দায়িত্বে।

 বাংলাদেশে নৌ-পথে সৈন্য এবং অন্যান্য সমর সরঞ্জাম পরিবহনের ব্যবস্থা বানচাল করার উদ্দেশ্যে জাহাজ এবং নৌ-যানগুলো ধ্বংস করাই ছিলো এই উদ্যোগের লক্ষ্য। অল্প খরচে দ্রুত এই লক্ষ্য অর্জনে পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক দরকার ছিলো- যাদেরকে সাঁতারের এবং ‘লিমপেট মাইনসহ বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের ট্রেনিং দেয়া যেতে পারে। এ কাজের জন্য উচ্চ ট্রেনিংপ্রাপ্ত লোকদের নিয়ে একটা বিশেষ কর্মসূচী গ্রহন করা হয় এ বিষয়ে বিস্তারিত কর্মসূচী প্রণীত হয় নৌ-বাহিনীর হেডকোয়ার্টারে। পরিকল্পনা অনুসারে চট্টগ্রাম ও মঙ্গলার সামুদ্রিক বন্দর, চাঁদপুর, দাউদকান্দি, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ, নগরবাড়ী, খুলনা, বরিশাল, গোয়ালন্দ ফুলছড়িঘাট এবং আরিচা ঘাটের নদীবন্দরগুলোর ওপর সরাসরি আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অভিযানের সাংকেতিক নাম দেয়া হয় অপারেশন জ্যাকপট'। অপারেশন কার্যকরী করার চূড়ান্ত দায়িত্ব দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট সেক্টর কমাণ্ডারদের উপর।

 ২৮শে জুলাই আমি ডেলটা সেক্টরের কমাণ্ডিং অফিসার ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সাবে সিং-এর সাথে বসে চূড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরী করেছিলেন। চার ঘণ্টারও বেশী সময় আমরা বিস্তারিত আলোচনা করি এবং চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্ণফুলী নদীর ম্যাপ ও চার্ট পর্যালোচনা করি। চন্দ্রতিথি, আবহাওয়ার অবস্থা, জোয়ার-ভাটার সময় বাতাসের গতি-প্রকৃতি, স্রোতের গতি এবং আরো অসংখ্য তথ্য আমাদের আলোচনায় প্রাধান্য লাভ করে। মে মাস থেকেই বন্দরের তৎপরতা সম্পর্কে খোজখবর নিচ্ছিলাম। আমরা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বন্দর এলাকা সম্পর্কে একটা পরিস্কার চিত্রও পেয়ে যাই। অপারেশনে আমাদের নৌ- মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় কি ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করতে পারে তাও আমরা বিশদভাবে পর্যালোচনা করি। বন্দরের জন্য পাক-বাহিনী কি ধরনের রক্ষাব্যবস্থা গ্রহন করেছে এবং সন্ত্রাসীরা কোথায় কিভাবে পাহারার ব্যবস্থা করেছে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। সে সময়ে রাতের বেলায় নদীমুখে সকল প্রকার নৌ- চলাচল নিষিদ্ধ ছিলো। প্রধান কয়েকটি গানবোট নিয়মিত