পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
356

 উপর পাকিস্তানীরা আক্রমণ চালায়। উভয়পক্ষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর আমরা পোড়াগাঁও এলাকা ছাড়তে বাধ্য হই। ভারতের লালগোলা এবং বাংলাদেশের ভেতরে ফরিদপুর থেকে বিভিন্ন গেরিলা দলকে রাজশাহী শহর, নওয়াবগঞ্জ, পাবনা এবং বগুড়াতে গেরিলা অপারেশন চালানোর জন্য পাঠাতে হত।

 অক্টোবর মাসে আমরা আবার পোড়াগাঁও পর্যন্ত দখল করে নেই। ডিসেম্বর মাস থেকে আমাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। ডিসেম্বরে আমরা নওয়াবগঞ্জ দখল করে নেই। নওয়াবগঞ্জের দিকে অগ্রসর হবার সময় আমাদের ও পাকিস্তানীদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর নওয়াবগঞ্জ দখলের সময় শহীদ হন। নওয়াবগঞ্জ দখলের পূর্বদিন আমাদের সাথে ভারতীয়ি এক রেজিমেণ্ট বি-এস-এফ দেয়া হয়। দুই-তিন মিনিট যুদ্ধের পর তাদের বহু আহত হয়। এবং মর্টার, মেশিনগান এবং গোলাবারুদ ফেলে তারা পলায়ন করে। নওয়াবগঞ্জ দখলের সময় কোন ভারতীয় সৈন্যের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে নাই।

 ১২ই ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা নওয়াবগঞ্জ থেকে রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হয়। পাকিস্তানী সৈন্যরা রাজশাহী ছেড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে নাটোরে আশ্রয় গ্রহণ করে।

স্বাক্ষরঃ মোঃ ফসিউদ্দিন
২-৫-১৯৭১


মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি[১]

॥ সে পথ দিয়ে পাকসেনারা ফিরলো না আর॥

 অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ক্যাপ্টেন ইদ্রিস আকস্মিকভাবে একটি সিক্রেট ইনফরমেশন পেয়ে গেলেন। ধেয়ে চললেন তিনি তার মুক্তিবাহিনী নিয়ে। হাতে তাদের থ্রি-নট-থ্রি, গ্রেনেড আর দুটি এল-এম-জি। হানাদার পাক বাহিনী সেদিন দিনাজপুর শহর থেকে স্কুলপাড়া হয়ে বর্ডার সাইডে আসছিল যে রুটে সেই রুটে পৌঁছে গেল ক্যাপ্টেন ইদ্রিস, খানসেনারা পৌঁছানোর আগেই। বিকেল তিনটা। খানদের ট্রাকের আওয়াজ পাওয়া গেল। দিনাজপুরের স্কুলপাড়ার রাস্তার পাশে, ঝোঁপঝাঁড়ে, গাছের ফাঁকে, আমগাছের ওপর, বাঁশঝাড়ের ফাঁকে প্রস্তুত লেঃ সাইদুল্লাহ, লেঃ আমিন, লেঃ কায়সার, সুবেদার এস এ রহমান, সুবেদার ইয়াসিন, হাবিলদার হাসান, হাবিলদার আজিজ, প্লাটুন কমাণ্ডার দেলওয়ার হোসেন, এফ-এফ- বাবলু, আবদুল লতিফ, আদুর রাজ্জাক, নূর মোহাম্মদসহ দেড়শ' মুক্তিবাহিনীর বীর সেনানী। এগিয়ে আসছে হানাদার ট্রাক দুটো স্কুলবাড়ির সন্নিকটে। ক্যাপ্টেন ইদ্রিস পর পর দুটো শিস দিলেন। ফায়ারিং-এর সংকেত আসবে শুধু একটা শিস। সবাই প্রস্তুত। থ্রি-নট-থ্রি'র ট্রিগারে আঙ্গুল নিশপিশ করছে। দম ধরে মুক্তিযোদ্ধারা শুণে যাচ্ছে প্রতিটি সেকেণ্ড। মুক্তিবাহিনীর এ্যামবুশের ভেতরে ঢুকেছে হানাদারদের প্রথম ট্রাক। ট্রাকের ওপর ২০/৩০ জন জোয়ান, হাতে তাদের অটোমেটিক চায়নিজ অস্ত্র। ট্রাকের ওপর এল-এম-জি ধরে দাঁড়িয়ে আছে তাগড়া দুজন, সামনের ট্রাক এ্যামবুশ পার হয়ে যাচ্ছে প্রায়। ক্যাপ্টেন ইদ্রিস সংকেত দিচ্ছেন না। সবাই হতভম্ব হয়ে যাচ্ছে। কি হচ্ছে। কিন্তু ক্যাপ্টেনের লক্ষ্য তখন পেছনে। আরও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঢুকছে আরেক ট্রাক পেছনে, সেটাকে এ্যামবুশের মধ্যে এনে না ফেলে তিনি পারেন না। সামনের ট্রাকে ফায়ার ওপেন করার নির্দেশ দিলেন।


  1. দৈনিক 'সংবাদ' ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮১ সংখ্যায় প্রকাশিত মুসা সাদিক রচিত প্রতিবেদন থেকে সংকলিত।