পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
358

 মাদলার ঘাটে আসিয়া পৌঁছে। তখন কোন নৌকা না থাকায় কলাগাছের ভেলা তৈয়ারী করিয়া ৩ জন সূর্যসৈনিক করতোয়া নদী পার হয়। পরিকল্পিত পথে মালগ্রামের ভিতর রাতের অন্ধকারে অগ্রসর হইতে থাকে। হানাদার বাহিনী প্রহরীরা তাহাদিকে চিনিয়া ফেলে। আত্মরক্ষার কোন পথ নাই জানিয়া সাইফুলেরা হানাদার বাহিনীর দিকে গ্রেনেড ছুড়িয়া মারে। হানাদারদের রাইফেল তখন গর্জিয়া ওঠে। তিনজনই অন্ধকারের মধ্যে তিনদিকে দৌড় দেয়। খানসেনাদের এলোপাতাড়ি গুলি আসিয়া সাইফুলের মাথায় লাগে। সাইফুল তৎক্ষণাৎ মাটিতে লুটাইয়া পড়ে। অর্ধমৃত অবস্থায় হানাদার বাহিনী সাইফুলকে ধরিয়া ফেলে।

 আগস্ট মাসের মধ্যভাগে একদিন রাত্রি তিন ঘটিকার সময় গেরিলা বাহিনী কর্তৃক বগুড়া- সারিয়াকান্দি রাস্তায় লাঠিমাররঘোন গ্রামের নিকটবর্তী ব্রীজটি ডিনামাইট দ্বারা উড়াইয়া দেয় এবং ব্রীজের দুই ধারে ৫০/৬০ গজ দূরে মাইন মাটির নীচে পুঁতিয়া রাখিয়া তাহারা চলিয়া যায়। পরের দিন সকালে ব্রীজের দুই ধারে পশ্চিম দিকের মাইনটি পাকসেনারা সন্ধান পাইয়া তুলিয়া নিয়ে যায় কিন্তু পূর্ব দিকের মাইনটির সন্ধান পায় নাই। তার পরের দিন ভোরে কয়েকটি গরুর গাড়ী পার্ট লইয়া গাবতলী বন্দরে যাইতেছিল। একটি গরুর গাড়ীর চাপ মাইনের উপর পড়িলে মাইনটি বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে গাড়ীটি ছিন্নভিন্ন হইয়া উড়িয়া যায়। একজন গাড়োয়ান সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যবরণ করে। আর একজন গুরুতররুপে আহত হয়। এর পরের দিন সারিয়াকান্দি ক্যাম্প হইতে পাকসেনারা আসিয়া ব্রীজের অবস্থাদৃষ্টে লাঠিমাররঘোন গ্রামে প্রবেশ করিয়া গ্রামের লোদিগকে অমানুষিকভাবে মারপিট করে এবং কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগাইয়া পোড়াইয়া ফেলে। তৎপর তাহারা কালূডাঙ্গা, শাহবাজপুর এবং সাতটিকরি গ্রামে প্রবেশ করিয়া কতকগুলি বাড়ি আগুন লাগাইয়া ভস্মীভূত করে। এই ব্রিজ ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করিয়া বর্বর পাক বাহিনী লাঠিমারঘোন গ্রামে পর পর তিনবার প্রবেশ করিয়া বাড়িঘর লুটপাট করে।

 ১৬ই আগস্ট সৈয়দ ফজলুর আহসান দিপুর দল সারিয়াকান্দি থানার নিকটবর্তী রামচন্দ্রপুর গ্রামে পাক বাহিনীর সহিত এক ভীষণ সংগ্রামে লিপ্ত হয়। প্রচুর গোলাগুলির পর ময়নুল হক নামে সারিয়াকান্দি থানার এক দারোগা, ৫ জন পাকসৈন্য ও কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়।

 আগস্ট মাসের মধ্যভাগে কমাণ্ডার আবুল হোসেন (বালুরঘাট), মোস্তফা রেজানুর (দিনাজপুর), এস, এম, ফারুক (বগুড়া), প্রভৃতির দ্বারা হিলিতে ট্রেন অপারেশন হয়। ইহার ফলে বহুসংখ্যক এবং কিছুসংখ্যক অবাঙ্গালী নিহত হয়। লাইন অপারেশনের সময় আবুল হোসেন নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়।

 আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মীর মঞ্জুরুল হক সুফীর নেতৃত্বে গেরিলা দল বগুড়া-সারিয়াকান্দি রাস্তার একটি ব্রীজে এক্সপ্লোসিভ লাগাইয়া সম্পূর্ণ ধ্বংস করে এবং ব্রীজের এক মাইল দূরে রাস্তায় মাইন পুঁতিয়া রাখে। পরে মাইন বিস্ফোরণে একটি মিলিটারী জীপগাড়ী ধ্বংস হওয়ার ফলে একজন অফিসারসহ ৬ জন পাকসৈন্য নিহত হয়।

 ২০শে আগষ্ট মাসুদ হোসেন আলমগীর নবেলের দল সারিয়াকান্দি থানার আওলাকান্দী গ্রামের পূর্বে যমুনা নদীতে একটি মিলিটারী লঞ্চ রকেট দ্বারা বিধ্বস্ত করে।

 ২রা সেপ্টেম্বর বর্বর পাকবাহিনী গাবতলী থানার জাত হলিদা গ্রামে অতর্কিত আক্রমণ করে। তখন সৈয়দ আহসান হাবিব দিপুর দল পাল্টা গুলিবর্ষণ করার ফলে একজন পাকসৈন্য নিহত হয়। পাকসৈন্যরা নিরীহ ৫ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। পরে সমস্ত গ্রামটাই আগুন জ্বালাইয়া পোড়াইয়া দেয়।

 ৪ঠা সেপ্টেম্বর ৬ জন পাক পুলিশ খাদ্য লইয়া বগুড়া হইতে সারিয়াকান্দি যাইতেছিল। পথে পাক পুলিশেরা যখন ফুলবাড়ি ঘাটে খেয়া নৌকায় উঠে তখন মুজিববাহিনীর মোফাজ্জল হোসেন (লাঠিমারঘোন), গোলাম জাকেরিয়া রেজা (ধাওয়া), সাইদুল ইসলাম, (বাইগুলি), মণ্টু (হুমাকুয়া) এবং গেরিলাবাহিনীর সৈয়দ আহসান