শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
উর্দু ভাষাকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার পক্ষে বক্তব্য | মাহে নও | জুলাই, ১৯৫১ |
উর্দুর ভূমিকা
ফজলুর রহমান
উর্দু বিভিন্ন ভাষার উপাদানের একটা সংমিশ্রণ এবং যারা উর্দুকে মাতৃভাষা বলে দাবী করেননি তাঁরাও উর্দুর তরান্ধীর পথে অনেক খোরাক জুগিয়েছেন। পাক-ভারত উপমহাদেশের ভাষার ক্ষেত্রে উর্দু বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগণকে এক গ্রন্থিতে সংযুক্ত করেছে। বিরোধী সমালোচকরা যাই বলুক না কেন প্রথম উর্দুর মধ্যেই এই উপমহাদেশের আন্তঃপ্রাদেশিক ভাষা সমস্যার সমাধান সম্ভবপর হয়েছিল। বিভিন্ন ভাষা দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে যে উর্দু তার সার্বজনীন গ্রহণ ক্ষমতা দ্বারাই ইহা সম্ভবপর হয়েছে। উর্দু সাহিত্যে যদিও কিছুটা আভিজাত্যের ছাপ আছে, তবু উর্দু ভাষার দেশের জনগণের সংগে অতি নিকট সম্পর্ক রয়েছে। তার জন্যই উর্দু কৃতিত্বের সংগে ও হিন্দু শাসকদের মারাত্মক আক্রমণের মোকাবেলা বৃটিশ ও জনগণের মনে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে।
আমাদের এই গোলযোগপূর্ণ ঝড়-ঝঞ্চ অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর আমাদের ভাবী বংশধরগণ কতকগুলো অপূর্ব অবদানের জন্য পাক-ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসের এই মুসলমান যুগটিকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।
প্রথমতঃ- স্থায়ী কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার জন্য দায়ী এই আদর্শ শাসন ব্যবস্থার ফলে দেশের পৃথক পৃথক অংশগুলো একই গ্রন্থিতে সংযোজিত হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ- দুনিয়ার কতকগুলো অতি সুন্দর স্থপতি শিল্পের জন্য।
তৃতীয়তঃ- উর্দু ভাষার ক্রমবিকাশের জন্য এই ভাষা আঞ্চলিক বাধা বিদূরিত করে দূর-দূরান্তের জনগণের নৈকট্য সাধন করেছে ও স্বাধীনভাবে আলাপ-আলোচনা ও ভাবের আদান-প্রদান করার সুযোগ দিয়েছে। শেষোক্ত দানটি প্রথমোক্ত দুইটার চাইতে অধিক স্থায়ী, কারণ শেষ পর্যন্ত বস্তুগত অলংকার অপেক্ষা সাহিত্য এবং কৃষ্টিই মনুষ্যজীবনে চিরস্থায়ী ছাপ রেখে যায়। বস্তুগত অলংকার ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায়; কিন্তু আদর্শ ও ভাবধারা বেঁচে থাকে।
ভাষা স্বতন্ত্রভাবে সমৃদ্ধশালী হয় না। ব্যবহারকারী জনগণের বাণীই ভাষা। কাজেই মুসলমানদিগকে একটা জাতি হিসাবে টিকে থাকার সংগ্রাম আর উর্দুকে জিইয়ে রাখার সংগ্রাম একই কথা। লক্ষ লক্ষ অমুসলমানের ভাষা ছিল এই উর্দু কিন্তু দেশ বিভাগের পূর্বে তারা উর্দুর দাবীকে প্রকাশ্যভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করতে থাকে ও ইহার মর্যাদাহীন করতে প্রবৃত্ত হয়। এই সংগ্রামে উর্দুই এই উপমহাদেশের মুসলিম তমদ্দুন ও তাহজীবের সাহিত্য ভাণ্ডাররূপে পরিগণিত হয়েছিল। যে সকল মুসলমান উর্দুকে তাদের মাতৃভাষা বলে দাবী করেননি, তাঁরাও এ বিষয়টা উপলব্ধি করেছিলেন এবং উর্দুই তাঁদের জাতিত্ববোধের অন্যতম সহায়ক হয়েছিল।
ইতিহাস আজ উর্দুকে বিবিধ ভূমিকায় গ্রহণের ইশারা দিচ্ছে। উর্দু আজ পাকিস্তান ভারতের মধ্যে মৈত্রী বন্ধনের সেতু নির্মাণ করছে এবং পাকিস্তান তার নিজের তরফ থেকেও এই সেতু অটুট রাখার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা আশা করি, অপর দিক থেকে শুভেচ্ছাকারীরাও উর্দুর ঐতিহাসিক ও তামুদুনিক বিশেষত্বের প্রশংসা করবেন।
পাকিস্তানে উর্দুর মাধ্যমেই আন্তঃপ্রাদেশিক আলাপ-আলোচনা ও সংবাদাদি আদান-প্রদান চলবে। উর্দু যদিও এদেশের লোকের মাতৃভাষা নয়; তথাপি ইহা তাঁদের মৌলিক ভাবধারার উপরই প্রতিষ্ঠিত এক দলের মতে পাঞ্জাব এবং অন্য দলের মতে সিন্ধু উর্দুর উৎপত্তি স্থান। সে যাই হোক, উর্দু সর্বদাই আমাদের দেশের শিক্ষিত