পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

বিচিত্রতা নয়, এবং আমাদের দেশে সব পাথরগুলো অবস্তু হয়ে উঠলে। একটাও বস্তু রইলো না। শিল্পের হিসেবে এটা একেবারেই ভাল নয়। এই দুৰ্দৈব শিল্পে আসবেই কড়া আইন হ’লে এটা যেন শাস্ত্রকারেরা দেখেছিলেন, তাই তাঁরা শিল্প সম্বন্ধে আইনের বজ্র আঁটুনির মাঝে নানান ফস্কা গেরো রেখে গেলেন যার গুণে শিল্পের বাঁধা গতি বাঁধা জিনিষের দুৰ্গতি থেকে বেঁচে গেল। ভারতবর্ষের বাইরে নানা ধৰ্ম নানা কালে শাস্ত্রীয় মূর্তি সমস্তের রচনা পদ্ধতি দিয়ে শিল্পী ও শিল্পকে বেঁধেছে অনেক স্থানে। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে সেখানে যেখানে শিল্প একটা দেবমূর্তির বৈরূপ্যমাত্র হয়ে উঠেছে। আমাদের মূর্তিশিল্প যে এ দুর্গতি থেকে বেঁচে গেছে তার একটা কারণ শিল্প রচনারও ভার একদল নিরক্ষর artistএর হাতে ছিল যারা ক্রিয়াবান, এবং জোর করে' তাদের শাস্ত্র গেলানো হয় নি। এদেশে এখনো পাকা কারিগর পাবে কিন্তু তাদের মধ্যে শিল্পশাস্ত্রজ্ঞানে একেবারে পাকা এমন লোক একজনও আছে কি না সন্দেহ। শিল্পশাস্ত্রের শাসন কি তারা অনেকেই জানে না অথচ দিব্য গড়ে চলেছে পুরুষানুক্রমে সঞ্চিত এবং অর্জিত শিল্পজ্ঞান নিয়ে নানা বস্তু! এদেশে শিল্পশাস্ত্র যা পাওয়া যাচ্ছে তা রাজ-রাজড়ার পুস্তকাগারে, নয় তো পণ্ডিতদের ঘরে,—শাস্ত্রে অপণ্ডিত কিন্তু শিল্পক্রিয়াতে সম্পূর্ণ পারগ শিল্পীদের পুঁথি ক্বচিৎ পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং শাস্ত্র যে খুব একটা বড় জায়গা পেয়েছিল শিল্পীদের ঘরে তা বোধ হয় না, শুধু সিন্দূর-চন্দনে পূজা পেয়েছিল। শোনা শাস্ত্র কতক এবং বংশানুক্রমে ক্রিয়া করে' দখল করা কলাবিদ্যা অনেকখানি, এই নিয়ে ভারত শিল্প গড়ে' উঠেছে, এটা দুঃখের কারণ নয় সুখের বিষয় বলতে হয়। শাস্ত্রের চাপ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি, তা থেকে বেঁচে গেছে এদেশের শিল্পীরা কাজের দিক দিয়ে শুধু তারা নিরক্ষর ছিল বলে। এখন আমরা, যারা পড়ে' শুনে' পাকা হয়ে শিল্পক্রিয়া করতে চলেছি, সেকাল যদি হঠাৎ একালে ফিরে আসে তবে শাস্ত্রের চাপন আমাদের উপর অনিবার্য। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা নির্ভয় যে স্বভাবের নিয়মে সেকাল একালের ত্রিসীমানায় আসতে পারে না, এলেও সজীব একালের পৃথিবীতে গতজীবন সেকালটা যদি ভূতের উপদ্রব বাধায় তো একাল সেটা সইতে নারাজ হবেই একদিন। সেকালের সঙ্গে একালের শিল্পের যোগ শিল্পশাস্ত্র পড়াশুনার দিক দিয়ে