পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৩৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাক



 একাধিক সুন্দর ও মনোহর পাখীর বর্ণনার পর এবার এমন একটি অতি-পরিচিত পাখীর কথা বলিব যাহার উপর আমরা নিতান্তই বীতশ্রদ্ধ। শুদ্ধ, সংস্কৃত ভাষায় ইহার নাম ‘বায়স’। এমন রাশভারি নাম থাকা সত্বেও, ইহার বদনামই বেশী। কি দেশী, কি বিদেশী, সকলেই এই পাখীর সম্বন্ধে বিদ্বেষভাব পোষণ করেন। কাকও আমাদের বিদ্বেষ কড়ায় গণ্ডায় ফিরাইয়া দেয়। ইহার লুণ্ঠনপরায়ণতা, চৌর্য্য, লোভ ও কপটতার দৌরাত্ম্যে আমরা সর্ব্বদাই ব্যতিব্যস্ত থাকি। আমি এহেন পাখীর পক্ষ সমর্থন করিয়া কিছু বলিব।

 নিদাঘের অবসরদিনে গৃহমধ্যে বৈদ্যুতিক পাখীর অভাবে তালবৃন্ত দ্বারা উত্তাপ তাড়াইবার বৃথা চেষ্টা করিয়া ক্লান্ত গলদঘর্ম পাঠক নিদ্রাদেবীর সুখক্রোড়ে আশ্রয় লাভ সম্বন্ধে যখন হতাশ হইয়া পড়েন, তখন বারান্দার রেলিং হইতে যে সুঠাম, সুগঠিত-দেহ, ভ্রমরকৃষ্ণ পাখিটি মাথা নাড়িয়া প্রকৃতির রুদ্রমূর্ত্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ জ্ঞাপন করে, তাহার কণ্ঠধ্বনি সম্বন্ধে নিদ্রা-প্রয়াসী পাঠকের অভিমত লিপিবদ্ধ করা হয়তো সুরুচিসঙ্গত হইবে না। যে সমস্ত সুগৃহিনী পাঠিকা কচি আম, বদরী প্রভৃতি অম্লরসাত্মক ফলের বিবিধ রসাল আচার প্রস্তুত করিতে নিপুণা, তাঁহারাও এই বিহঙ্গটিকে সুনজরে দেখেন না। যাঁহাদের কটাক্ষবর্ষণে ত্রিভুবন চঞ্চল, তাঁহাদের ক্রুদ্ধ দৃষ্টিকে এ পাখী নিতান্তই অবজ্ঞা করে—দুষ্ট পাখী পালটিয়া গালি দেয়—“কা—কা— কাণা হও—কাণা হও।”

 অতি শৈশবেই আমরা কাকের প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ হইতে শিখি। ভেতো বাঙ্গালীর বাচ্ছা যখন ভাত খাইতে বিদ্রোহ করে, তখন