পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৩৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৬
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

হইত এবং আশেপাশে যত কাক থাকিত সকলেই ছুটীয়া আসিয়া আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি সুরু করিত। আমি যতই অগ্রসর হইতাম তাহারা সামনের দিকে যথেষ্ট দূরত্ব রক্ষা করিয়া চিৎকার করিতে করিতে ফেউয়ের মত সঙ্গ লইত। ফলে সে তল্লাটের খেচরপলায়ন করিত। কাক বন্দুক জিনিষটীর ব্যবহার বেশ জানে। যতক্ষণ হাতে বা কাঁধের উপর বন্দুক থাকিত ততক্ষণ তারা আমার কাছাকাছি হাত ৩০-৪০ দূরে দূরে চলিত। যদি নিশানা করিবার জন্য বন্দুক উঠাইয়াছি, অমনি যে যেখানে থাকিত ভোঁ দৌড়। কিন্তু বন্দুকের হননক্ষমতা যে সসীম দূরত্বের উপর নির্ভর করে সে তথ্যটী যেন ইহারা জানে—তাই যথোচিত দূরে সরিয়া গিয়াই বিদ্রূপ ও গালি দিতে আরম্ভ করে। তুমি ছড়ি লইয়া বেড়াও, কাক তোমাকে গ্রাহ্য করিবে না। কিন্তু একটী টিল কুড়াইয়া লওয়া মাত্র সে চম্পট দিবে। কাক বড় উপদ্রব করিতেছে, তুমি একটী গুল্‌তি বাঁশ লইয়া ঘর হইতে বাহিরে আইস,—তোমাকে দেখিবামাত্র কাকের হঠাৎ মনে পড়িয়া যাইবে যেন ওপাড়ায় তাহার একটা নিমন্ত্রণ আছে।

 কাক আমাদের ধাঙ্গড়ের কাজ করে একথা নুতন করিয়া বলিয়া দিতে হইবে না। আমাদের মিউনিসিপালিটী ও কলিকাতা কর্পোরেশনে স্বায়ত্ত-শাসনের ঠেলায় রাস্তাঘাটে মৃত মুষিক বিড়ালাদি পড়িয়া পচিতে থাকে। কাকের কল্যাণে গলিবাসী নির্জীব বাঙ্গালী কিছুটা স্বস্তি পায়।

 গবাদি পশুর সঙ্গে কাকের খুবই সম্প্রীতি। এইসব বিশালকায় চতুষ্পদের পদতাড়নায় শষ্প মধ্য হইতে অনেক কীটপতঙ্গ স্থানচ্যুত হয়। এইসকল কীটাদির লোভে কাককে উহাদের সঙ্গে হাঁটিতে দেখা যায়। আবার গরু যখন বসিয়া জাবর কাটে, কাক তখন তাহার নাসিকামধ্য, পৃষ্ঠ বা পুচ্ছ হইতে, কর্ণ বা চক্ষুর কোণ হইতে এঁটুলি পোকা ঠোকরাইয়া তুলিয়া লয়। গরু ইহাতে আরাম পায়। মুখাগ্রে কাককে