পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চারিত্রিক বিশেষত্ব
১২১

যাহা ছিল তাহাতে রাজনৈতিক বিষয়, অথবা ধীরভাবে কোনো সামাজিক বা ধর্ম্মনৈতিক বিষয় আলোচিত হইত না। অল্পদিন পরেই বিদ্যাসাগর মহাশয় দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের হস্তে সোমপ্রকাশের ভার অর্পণ করেন। এখানেও তাঁহার বিবেচনায় কোনো ভুল হয় নাই।

 বিদ্যাসাগর অত্যন্ত সদালাপী ছিলেন। লোকে তাঁহার কথাবার্তা মুগ্ধ হইয়া শুনিত। রসিকতায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। মানুষের অকৃতজ্ঞতায় জীবনের অপরাহ্ণে তাঁহার মনটা তিক্ত হইয়া উঠিয়া ছিল। “সে আমার নিন্দে করলে কেন, আমি ত তা’র কোনো উপকার করিনি”—এইরূপ তীব্র ব্যঙ্গপূর্ণ কথা তাই তাঁহার মুখ দিয়া উচ্চারিত হইতে শুনিতে পাই।

 বিদ্যাসাগরের কর্ম্মশক্তি ছিল অপূর্ব্ব। কর্ম্মের মধ্য দিয়াই তাঁহার প্রতিভা স্ফূর্ত্ত হইত। তিনি ভাবুকের ন্যায় শুধু স্বপ্ন দেখিতেন না,— তিনি কাজের লোক ছিলেন। তাই যে-কাজ অন্যের কাছে প্রায় অসম্ভব ছিল, সেই কাজকেই তিনি সম্ভবপর করিয়া তুলিয়াছিলেন। তিনি বিরাট পুরুষ ছিলেন।

“বৃহৎ বনস্পতি যেমন ক্ষুদ্র বন-জঙ্গলের পরিবেষ্টন হইতে ক্রমেই শূন্য আকাশে মস্তক তুলিয়া উঠে—বিদ্যাসাগর সেইরূপ বয়োবৃদ্ধিসহকারে বঙ্গসমাজের সমস্ত অস্বাস্থ্যকর ক্ষুদ্রতাজাল হইতে ক্রমশঃই শব্দহীন সুদূর নির্জ্জনে উত্থান করিয়াছিলেন; সেখান হইতে তিনি তাপিতকে ছায়া এবং ক্ষুধিতকে ফলদান করিতেন; কিন্তু আমাদের শত সহস্র ক্ষণজীবী সভাসমিতির ঝিল্লিঝিঙ্কার হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ছিলেন। ক্ষুধিত পীড়িত অনাথ অসহায়দের জন্য আজ তিনি বর্তমান নাই,— কিন্তু তাঁহার মহান্ চরিত্রের যে অক্ষয়বট বঙ্গভূমিতে রোপণ করিয়া গিয়াছেন তাহার তলদেশ সশস্ত বাঙালী জাতির তীর্থস্থান হইয়াছে। আমরা সেইখানে আসিয়া আমাদের তুচ্ছতা ক্ষুদ্রতা নিষ্ফল