পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রবি-প্রদক্ষিণ
১৭৭

করিয়াছেন, তাঁহারই লীলার পোষকতা ভিন্ন নিজের পৃথক আত্মপ্রসাদ যেন তাহাতে নাই। ‘জীবনদেবতা’ নামে এই যে এক অধিষ্ঠাত্রী দেবতার কল্পনা করিয়া এককালে তিনি আশ্বস্ত হইতে চাহিয়াছিলেন, তাহার কারণ, ইহাই বলিয়া মনে হয়; রূপরসসাধনার মধ্যেও তাঁহার চিত্তে একটি গভীর বৈরাগ্য প্রচ্ছন্ন ছিল।

 ইহার পরে তাঁহার সেই বন্ধন ঘুচিয়াছে; বিশেষকে ছাড়িয়া নির্ব্বিশেষের যে আনন্দ-মুক্তি, কবি অতঃপর তাহারই সাধনা করিয়াছেন। এ অবস্থা এতই বিপরীত যে, ইহার সহিত পূর্ব্বের সেই সাধনরীতি মিলিবে না। কবি যেন এক পার হইতে অন্য পারে গিয়া উঠিয়াছেন; এপার হইতে যেমনটি দেখিতেন ওপার হইতে আর তেমনটি দেখেন না। কবিদৃষ্টির এই প্রভেদ এত বড় প্রভেদ যে, ইহাকে কবির ব্যক্তিমানসের একটি পরিণতি-অবস্থা বলিয়া স্বীকার করিলেও, তাঁহার কবিস্বপ্নে যে রূপান্তর ঘটিয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। কবি নিজেও এ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ আত্মসচেতন— তাঁহার ‘খেয়া’ কাব্যথানির নামই এই তটপরিবর্ত্তন ঘোষণা করিতেছে। ‘খেয়া’র পর হইতেই কবি গীতি-বিবশ হইয়াছেন, জগৎ ও জীবন দূর পরপারের তটরেখার মত ছায়াময় হইয়া উঠিয়াছে—“চোখের জল ফেলতে হাসি পায়”। কবির ইষ্টদেবতা এখন আর জীবনদেবতা নয়, তিনি আর রহস্যময় নহেন; কবি ও তাঁহার সেই দেবতার মধ্যে জগৎদৃশ্যের অন্তরালখানি ঘুচিয়াছে, সকল সীমাকে তিনি অসীমায় যুক্ত করিয়াছেন। এইখানেই আমরা কবিজীবনের পূর্ব্বার্দ্ধ ভাগের পূর্ণচ্ছেদ দেখিতে পাই। ইহার পর রবীন্দ্রনাথ এখনও রূপসাগরে ডুব দিতেছেন বটে, কিন্তু সে অরূপ– রতনের আশায়। এখন কবির কাব্যকল্পনা ক্ষান্ত হইয়াছে—এ যুগ