পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮২
বিবিধ কথা

গন্তব্য নাই। এই পরিদৃশ্যমান বস্তুরূপময় জগৎ যে অনিত্য, কিছুই স্থায়ী নয়—ইহাই তো পরম আশ্বাসের কথা; কারণ স্থিরতাই মৃত্যু, যাহা গতিহীন তাহাই জড়স্তূপ; জীবন অর্থে সেই গতিধারা—যাহা কখনও থামিবে না, অতএব যাহার শেষ নাই—সৃষ্টিরও যেমন শেষ নাই, ধ্বংসেরও তেমনই শেষ নাই। এই যে অনাদ্যনন্ত কালস্রোত, ইহার সহিত নিজ জীবিত-চেতনা মিলাইয়া লইতে পারিলে কোন ভাবনাই থাকে না; অনিত্যকেই নিত্য-আনন্দের নিদান বলিয়া উপলব্ধি করিতে পারিলে সকল মোহ দূর হয়—কোনও দায়িত্ব, কোনও বন্ধন আর থাকে না। পথের শেষ নাই বলিয়াই নিত্য-নূতনের আশায় উৎসাহে আত্মার অবসাদ ঘটে না, ক্রমাগত “হেথা নয়, হেথা নয়, আর কোনখানে”— অন্তরের এই চির অতৃপ্তিই আত্মাকে অসীমের সন্ধানে ব্যাপৃত রাখিয়া তাহার অফুরন্ত বিকাশের সমাপ্তি ঘটিতে দেয় না। সৃষ্টির অনন্তপ্রবাহিনী সেই মহাজীবনধারাকে সম্বোধন করিয়াই কবি এই অপূর্ব্ব স্তোত্র পাঠ করিয়াছেন।

 এই দুই দৃষ্টিভঙ্গি শুধুই বিভিন্ন নয়, একেবারে বিপরীত। এক হইতে অপরটিতে সংক্রমণের কোনও সহজ সরল সেতু নাই। পূর্ব্বোদ্ধৃত কবিতায় একটি গভীর বিধুরতার ভাব আছে; জগতের কঠোর নিয়তিকে অগ্রাহ্য করিয়া আপনার অন্তরের প্রেমের শক্তিকে অনুভব করিয়া সান্ত্বনা লাভের যে চেষ্টা আছে, তাহাতে নিখিল মানব-হৃদয়ের স্পন্দন রহিয়াছে। এজন্য ইহা কাব্যহিসাবে অধিকতর সার্থক হইয়াছে। এখানে কবি রূপরসশব্দস্পর্শময়ী জীবধাত্রী ধরণীর প্রত্যক্ষ রূপকে স্বীকার করিয়াছেন। ‘বলাকা’য় কবির দৃষ্টি সেই প্রত্যক্ষ রূপজগতের অন্তরালে এক ‘অলক্ষ্য সুন্দরী’র ধ্যান করিতেছে; তাহার যে প্রেম, সে