পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রবি-প্রদক্ষিণ
১৮৩

প্রেম কিছুকে ধরিয়া রাখিতে চায় না—সে প্রেম সর্ব্বনাশা। এখানে কবি জীবনের পরিবর্ত্তে যে মহাজীবনের জয়গান করিতেছেন, তাহ দেহমনের সর্ব্বসংস্কারমুক্ত; স্নেহ-মমতার বন্ধন তাহাতে নাই—সে একটি অতিশয় নির্ম্মম-নিশ্চিন্ত উদাস-স্বাধীন শাক্ত-তান্ত্রিক আদর্শ। ইহাও এক প্রকার নির্ব্বাণ-মোক্ষের শূন্যবাদ। এ তত্ত্বকে কাব্যরসে মণ্ডিত করিবার শক্তি রবীন্দ্রনাথের প্রতিভাতেই সম্ভব হইয়াছে, তথাপি ইহাও সত্য যে, কবি এখানে ধর্ম্মান্তর গ্রহণ করিয়াছেন। একদিন কবি আপনার দেহমন-প্রাণের পাত্রে বিশ্বের যত-কিছু রূপরস একই পানীয়রূপ পান করিয়া ধন্য হইয়াছিলেন; খণ্ডকে তিনি কখনও স্বীকার করেন নাই বটে, কিন্তু খণ্ডের মধ্যেই অখণ্ডকে উপলব্ধি করিয়াছিলেন, বন্ধনের মধ্যে মুক্তির স্বাদ লাভ করিতে চাহিয়াছিলেন। তাই তখন আমরা কবির মুখে এমন সকল গভীর বাণী শুলিয়াছিলাম—

বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি, সে আমার নয়।
অসংখ্য বন্ধন-মাঝে মহানন্দময়
লভিব মুক্তির স্বাদ।

কিংবা—

দেহে আর মনে প্রাণে হয়ে একাকার
একি অপরূপ লীলা এ অঙ্গে আমার!
তোমারই মিলন-শয্যা, হে মোর রাজন্,
ক্ষুদ্র এ আমার মাঝে, অনন্ত আসন
অসীম বিচিত্র কান্ত! ওগো বিশ্বভূপ,
দেহে মনে প্রাণে আমি একি অপরূপ!