পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃত্যু-দর্শন
১৮৯

মহানির্ব্বাণের পূর্ব্ব মুহূর্ত্তে কি অনুভব হয়, তাহা কেহ কাহাকে জানাইতে পারে না। মৃত্যু কি, তাহা কেহ জানে না, জানিবার কোনও উপায় নাই; যাহা জীবনের বিপরীত, জীব তাহা ধারণা করিতে পারে না। তাই মৃত্যুর ঘটনা মানুষ দেখে, মৃত্যুকে জানে না; বুদ্ধির দ্বারা তাহাকে আয়ত্ত করিতে পারে না বলিয়াই বোধ হয় সত্যকার মৃত্যুচিন্তা কেহ করে না।

 যে দ্বার রুদ্ধ, যে পৈঁঠার পরে আর পদক্ষেপ নাই—যাহাকে ক্রমাগত চলিতেই হইবে সে সেদিকে চাহিবে কেন? যাহাকে জানা পর্য্যন্ত ধর্ম্মবিরুদ্ধ——জানার নামই জীবধর্ম্মের নিবৃত্তি, তাহাকে জানিবার প্রবৃত্তিই যে হয় না!

 তাই মৃত্যুকে একটা অবশ্যম্ভাবী ঘটনারূপেই সে দেখে—ক্ষণিক বিভীষিকা প্রতি রাত্রির দুঃস্বপ্নের মত প্রভাতের আলোকে প্রত্যহ মুছিয়া যায়, জীবনের জাগ্রত যাত্রার অবিরত তাড়নায় মৃত্যুর ফাঁক ভরিয়া উঠে। এ যাত্রায় কিছুই ফিরিয়া দেখিবার অবকাশ নাই, ইহাতে বর্ত্তমান ছাড়া কাল নাই; পরের মৃত্যু অতীত, নিজের মৃত্যু ভবিষ্যৎ—এ দুইটার কোনটাই বাস্তব নয়।

 অতএব মৃত্যু কি তাহা আমরা যেমন জানি না, তেমনই জানিবার কোনও প্রয়োজনও হয় না। কিন্তু তথাপি মৃত্যুর একটা রূপ আমরা দেখি, সেই পরোক্ষ দেখাও অপরোক্ষ হইয়া উঠে—যখন চোখের সম্মুখে প্রাণসম প্রিয়জনের শেষ নিশ্বাস-ত্যাগের সেই চরম মুহূর্ত্ত গণনা করি। জীবনের সেই অবসান-দৃশ্য, প্রাণবায়ু-ত্যাগের সেই প্রত্যক্ষ প্রমাণ তখন একটা বিস্ময় বা বিভীষিকার মত কেবল একটা বিমূঢ় ভাবের উদ্রেক করে না, কেবল মন বা মস্তিষ্কের উপরেই আঘাত করে না—হৃদয় মথিত করে;