পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
বিবিধ কথা

জীবনের পুষ্প-পতাকাময় তোরণের অন্তরালে যে কঙ্কাল লুকাইয়া আছে, তাহা যেন নির্লজ্জভাবে উদ্ঘাটিত হইয়া যায়। সেও মৃত্যুর স্বরূপ নয় —তবু একটা রূপ আমরা দেখি; এই দেখিতে পাওয়ার কারণ আর কিছু নয়, আমাদেরই একটা অংশ—প্রাণবৃক্ষের একটি শাখা—তখন শুকাইয়া খসিয়া যায়। সে যেন আমাদেরই আংশিক মৃত্যু, সে মৃত্যু তখন অনুভব করি প্রাণের মধ্যে; এই প্রাণী-দেহ যে স্নায়ুশিরা-বন্ধনের শত গ্রন্থিতে দৃঢ়বদ্ধ হইয়া আছে সেই গ্রন্থিতে চোট লাগে—সে বন্ধন আর তেমন থাকে না, শিথিল হয়; কয়েকটা স্নায়ু হয়তো ছিঁড়িয়া যায়। যাহাকে বুকের কাছে ধরিয়া রাখিয়াছিলাম, যাহাকে হৃদয়ের স্নেহরসে পুষ্ট করিয়াছিলাম, যাহার জীবনে আমার জীবন বেগ সঞ্চার করিয়াছে—মৃত্যু যখন তাহাকে গ্রাস করে, তখন আমারই কতকটা তাহার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়; না মরিয়াও আমি মৃত্যুর স্পর্শ লাভ করি।

 সাধারণে ইহাকে বলে শোক। শোক বাহিরের আক্ষেপমাত্র, সে বেশি দিন থাকে না। জীবন্ত দেহে অস্ত্রোপচার করিলে ক্ষতঅঙ্গে স্নায়ু-পেশীর যে স্পন্দন অবশ্যম্ভাবী, শোক তদতিরিক্ত কিছু নহে। এই শোক বা আক্ষেপ অস্ত্রাঘাতমাত্রেই হয়; কিন্তু সকল অস্ত্রাঘাতে অঙ্গহানি হয় না—দেহের একটা অংশ বিচ্ছিন্ন হয় না। শোক কালে শান্ত হয়; কিন্তু সেই অঙ্গহানি, প্রাণের সেই আংশিক মৃত্যুর কোনও প্রতিকার নাই; বরং বাহিরের আক্ষেপ বা শোক যত প্রবল ততই সান্ত্বনার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আত্মীয়-বিয়োগে মৃত্যু যাহার অন্তরে প্রবেশ করিয়াছে তাহার পক্ষে সকল সান্ত্বনা নিরর্থক বলিয়াই বাহিরে কোনও আক্ষেপের লক্ষণ প্রকাশ পায় না; সে মূঢ় মুক হতচেতন