পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃত্যু-দর্শন
১৯৫

আমি ছাড়া আর সবটাই এই জগতের অন্তর্গত; এই আত্মপ্রয়োজনাধীন জগতের এক টুকরাও হারাইবে না—যতক্ষণ না আমি আমাকে এতটুক হারাইতেছি। সকলই পর, সকলই পর, সকলই পর। এ পরের যেটুকুকে আপন বলিয়া ভাবি, তাহাও জীবনের লীলা-সুখের জন্য নিজ আত্মার অভিমান পরের উপর আরোপ করা; কাজেই তাহা মিথ্যা। প্রিয়জনের মৃত্যুতে সেই অভিমান ব্যর্থ হয়—সে যেন তাহা প্রত্যাখ্যান করিয়া আমাকে ফিরাইয়া দেয়, তাই আঘাত পাই, সেই আঘাতের নাম শোক। তারপর, সে ক্ষতি তখনই অন্য দিক দিয়া পূরণ করিয়া লই; কিংবা ব্যয়-সংক্ষেপ করি, অর্থাৎ বৈরাগ্য-সাধনা করি। আত্মীয়ের মৃত্যুতেই প্রমাণ হয়—সে কতদূর অনাত্মীয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কত মিথ্যা; মানুষের ভাগ্য-বিধাতা মানুষকে কতটা আত্মৈকশরণ, আত্মপরায়ণ, নিঃসঙ্গ, একক করিয়া সৃষ্টি করিয়াছেন; তাহার জীবনে স্বকর্ম্মনির্দ্ধারিত পথ বা আত্মস্বার্থসাধন ভিন্ন গত্যন্তর নাই। আত্মীয়-অনাত্মীয় যাহার দশা যেমন হউক, যে যখন যেখানে যেরূপ করিয়াই জীবনলীলা শেষ করুক—আসলে তোমার তাহাতে ক্ষতিবৃদ্ধি নাই। তোমার পথে তুমি চলিতে থাকিবে, তুমি ফিরিয়াও চাহিতে পার না—চাহ না। ফিরিয়া যদি চাহিতে, তবে তুমিও মরিতে—পাণ্ডবগণের স্বর্গারোহণ-কাহিনী স্মরণ কর। তুমি মরিতে চাও না—তাই ফিরিয়া চাহিতেও নারাজ। তাই বিশ্বাস হয়, অপরের মৃত্যু অপরেরই—সে যতই প্রিয়জন হউক; সে মৃত্যু আমাদের নিকট অবাস্তব—নিজের মৃত্যুই একমাত্র বাস্তব।

 পূর্ব্বে বলিয়াছি, মৃত্যুকে আমরা দেখিয়াও দেখি না; তথাপি সময়ে সময়ে প্রাণসম প্রিয়জনের মৃত্যু আমাদের দৃষ্টিকে অপলক