পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃত্যু-দর্শন
১৯৭

করিলাম—উপলব্ধি করিলাম, আমি বাঁচিয়া আছি। শবদেহ বক্ষে চাপিয়া ধরিলাম, মাথায় মুখে হাত বুলাইতে লাগিলাম; কারণ, তখন স্পষ্ট বুঝিলাম, অবশিষ্ট যাহা তাহা এই দেহটা, উহার অতিরিক্ত আর কিছু অস্তিত্বের সীমানায় আর নাই। চিরদিনের শিক্ষা-সংস্কার বিস্মৃত হইলাম—যে গেল সে ওই দেহটা নয়, আর কিছু; সে আর উহার মধ্যে নাই, ত্যক্ত বসনের মত সে উহাকে পরিহার করিয়া গিয়াছে—এ সকল কথা বিশ্বাস হইল না। দেহের দিকে না তাকাইয়া তাহার আত্মার প্রয়াণ-পথ কল্পনা করিতে পারিলাম না; কারণ, মৃত্যু কি, তাহা সেই মুহূর্ত্তে হৃদয়ঙ্গম করিলাম। জীবন ওই দেহেরই ধর্ম্ম—জীবিতের মূর্ত্তি ওই দেহ—ওই মুর্ত্তি মরিয়াছে, সে আর বাঁচিয়া নাই—সে আর নাই। তবু যতক্ষণ ওই দেহটা আছে, প্রাণহীন হইলেও তাহাকেই দেখিতেছি—তাহাকে আর কোনও রূপে কল্পনা করিতে পারি না। যে রহস্যময় প্রাণবায়ু ওই দেহকে ত্যাগ করিয়া গেল, সে মহাশূন্যে মিলাইয়া গিয়াছে, দীপনির্ব্বাণ হইলে শিখা যেমন শূন্যে বিলীন হয়। সে বায়ু ওই দেহকেই সঞ্জীবিত করিয়াছিল—তাই তাহার এত মূল্য; সেই বায়ু এখন নিঃশেষ হইল, মানুষ মরিল। শবমুখে যতই চাহিয়া দেখি, ততই মনে হয় সে মুখ যেন কাঙালের মুখ—প্রাণ হারাইয়া সে যেন সর্ব্বস্ব হারাইয়াছে, তার আর কিছু নাই— কিছু নাই! সে মুখে চাহিয়া স্পষ্ট বুঝিলাম—এই শেষ! এইখানেই সব শেষ—তাহার অস্তিত্বের শেষ নিদর্শন ওই দেহ। মৃত্যু তাহার মুখে ভয় বা বিস্ময়ের চিহ্ন অঙ্কিত করে নাই—অতি দীন দুঃখী ভিখারীর মত সে মুখে একটি বড় করুণ ছায়া বিস্তার করিয়াছে; জীবন ও মৃত্যুর সন্ধি-মুহূর্ত্তে যে সত্য তাহার মুখে মুদ্রিত হইতে দেখিলাম তাহাতে সকল