পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃত্যু-দর্শন
২০৩

জীবনকে যথার্থরূপে ভোগ করিবার মত হৃদয়-বল নাই বলিয়া, এ পথ্য হজম করিবার মত পরিপাক-শক্তি নাই বলিয়া—সাধারণ জীব আমরা দুধে জল মিশাইয়া, নানা পেটেণ্ট ঔষধের সহযোগে জীবন-পিপাসা নিবৃত্তির উপায় করিয়া থাকি।

 মৃত্যুকে যে যথার্থরূপে দেখিয়াছে, সে দ্বিজত্ব লাভ করিয়াছে—মিথ্যা হইতে সত্যে নব-জন্ম লাভ করিয়াছে। তাহার মানস-প্রকৃতির একটা পরিবর্ত্তন এই হয় যে, সে কোনও কিছুর পরিণাম বা ভবিষ্যৎ পূর্ণতায় আর বিশ্বাস করে না। সে আর যাচ্‌ঞা করে না, প্রাথনা করে না—লাভ-ক্ষতি, মঙ্গল-অমঙ্গল তাহার নিকটে সম-মূল্য। জীবন-বিধাতার নিয়তি-রূপ সে মানিয়া লয় বটে, সে শক্তিকে সে প্রত্যক্ষ করে জীবনমৃত্যুর বন্ধন-পাশরূপে—সে শক্তি ঈশ্বর নয়, তাহার স্বাধীন কর্ত্তৃত্ব নাই; এই জগতের অণু-পরমাণু হইতে মানুষের প্রাণ পর্য্যন্ত সৃষ্টির যত কিছু রূপ-বৈচিত্র্য যে অলঙ্ঘ্য নিয়মের অধীন, সেই নিয়ম-বন্ধনের মূলগ্রন্থিরূপেই সে তাহাকে চিনিয়া লয়; সে গ্রন্থি—আপনাকে আপনি উন্মোচন করা দূরে থাক—একটু শিথিল করিতেও পারে না। ইহাও সে বুঝে—তাহার সেই শক্তির সীমা কতদূর। আমার জীবন-সংস্কারের বাহিরে আমার উপরে তাহার অধিকার কোথায়? জীবনে আমি তাহারই স্ব-বন্ধন-রজ্জুতে আবদ্ধ আছি; মৃত্যুতে আমি সকল বন্ধনমুক্ত—অস্তিত্বের বহির্ভূত। অতএব যে মৃত্যুর স্বরূপ-সন্ধান পাইয়াছে—সে আশাহীন, ভয়হীন; তাহার পরিণাম-চিন্তা নাই, তাহার ভগবান নাই। সে হাতযোড় করিয়া কিছুই যাচনা করে না। যে কেহ এইরূপ দ্বিজত্ব লাভ করিয়াছে, সে নিশ্চয়ই কোনও না কোনও সুযোগ-মুহূর্ত্তে মৃত্যুকে দেখিতে পাইয়াছে—সে দেখা এমন দেখা যে, তাহার পর জীবন-সংস্কারের