পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃত্যু-দর্শন
২০৭

ভরসায় মানুষ যেমন ইহজীবনের সর্ব্বস্ব হাসিমুখে ত্যাগ করিতে পারে, তেমনই ভ্রূক্ষেপহীন হইয়া জীবনের সর্ব্বস্ব লুণ্ঠন করিয়া ভোগের পথে নিঃশেষে আপনাকে ছাড়িয়া দিতে পারে; কারণ উভয়ত্র এ বিশ্বাস আছে যে, ইহাই শেষ নয়—আমার মৃত্যু নাই, শেষ পর্য্যন্ত কোন খানে ক্ষয় বা ক্ষতির আশঙ্কা নাই; যে অসীম অনন্ত জীবন সম্মুখে নিত্যকাল প্রসারিত হইয়া থাকিবে, তাহাতে কত অবস্থান্তর, কত জয়-পরাজয়, কত লাভক্ষতির অবকাশ আছে! দুঃখ কিসের? কার্পণ্যের প্রয়োজন কি? ভোগেই হোক আর ত্যাগেই হোক, মানুষের অন্তরের অন্তরে সেই বিশ্বাস থাকে—সেই কল্পনার শক্তিই মানুষকে এত শক্তিশালী করিয়া তোলে।

 অতএব, মানুষের পক্ষে এই কল্পনাই ভাল—সত্য ভাল নয়; সত্য বিষ, সত্য মারাত্মক। মানুষের সমগ্র জীবনাদর্শের মূলে আছে এই প্রকাণ্ড ছলনা, এই মহতী মিথ্যা। যোগী, ঋষি, সন্ন্যাসী, দার্শনিক কেহই এই মিথ্যার সেবা হইতে নিষ্কৃতি পায় নাই; নাস্তিক বা আস্তিক, ভক্ত বা জ্ঞানী, সকলেই—কেহ সূক্ষ্ম কেহ স্থূলভাবে—এই মিথ্যার আরাধনা করিয়া থাকে। মৃত্যুর অন্তর্নিহিত যে সহজ প্রত্যক্ষ সত্য তাহাতে আস্থাবান না হইবার একমাত্র কারণ—মানুষ মরিতে চায় না; এমন কথা স্পষ্টই বলে, যেহেতু আমি মরিতে চাই না, অতএব আমি মরিব না। মৃত্যুর সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেই দার্শনিক যে সকল তত্ত্বের আলোচনায় প্রবৃত্ত হয় তাহাতে সে প্রশ্নের কোনও সরাসরি জবাব মেলে না। সচ্চিদানন্দ-ব্যবসায়ী বৈদান্তিক অস্তি-ভাতি-নামরূপ প্রভৃতি ব্যাখ্যার দ্বারা, ক্ষুদ্র আস্তিক্যবুদ্ধি লোপ করিয়া মহা আস্তিক্যবুদ্ধির প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত হইয়া উঠেন। বেশ বুঝিতে