পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১০
বিবিধ কথা

না। মৃত্যু যে কত বড় পরিসমাপ্তি, কত বড় শূন্য, তাহা আত্মাভিমানী জ্ঞানী বুঝিবে কেমন করিয়া? যে আপনাকে ত্যাগ করিতে পারে না, যে নিজে মরিতে ভয় পায়, সে আপনার জন্য একটা অবিনশ্বরতার স্বপ্ন দেখে—যেমন অর্থেই হোক, একটা অস্তিত্বের অভিমান সে শেষ পর্য্যন্ত ধরিয়া থাকিবে। তাই, যে গেল সে যে একেবারেই গেল, এমন বিশ্বাস সে প্রাণ থাকিতে করিবে না। কিন্তু যে পরের মৃত্যুতে আপনার ভাবনা না ভাবিয়া পরের ভাবনাই ভাবে; যে মরিল তাহার আত্যন্তিক অভাব অনুভর করার পক্ষে যাহার নিজ পরিণাম-ভাবনা বাধা হইতে পারে না, সে-ই অন্তরের অন্তরে বুঝিতে পারে—মৃত্যুর পর আর কিছু থাকে না; কারণ, সে যে মৃত প্রিয়জনের সম্পর্কে সত্যকেই চায়, মিথ্যা দিয়া সেই অভাব পূরণ করিতে তাহার হৃদয় একাস্ত বিমুখ। এজন্য প্রেমই মানুষকে মৃত্যুর স্বরূপ দেখায়, প্রেমিক ভিন্ন আর কেহ নাস্তিক হইতে পারে না। জগতের আদি মহাপ্রেমিক বুদ্ধ-ভগবান এই জন্যই নাস্তিক ছিলেন; তিনি আত্মার গল্পে বিশ্বাস করিতে পারেন নাই—তিনি মৃত্যুকে দেখিয়াছিলেন বলিয়াই জন্মস্রোত রুদ্ধ করিবার জন্য নির্ব্বাণ-মন্ত্র প্রচার করিয়াছিলেন।

 মৃত্যু-দর্শন সম্বন্ধে যাহা লিখিয়াছি, তাহা তত্ত্বালোচনা বা চিন্তাবিলাস নয়। মৃত্যুর তত্ত্বালোচনা করিতে হইলে সমগ্র মানব-চিন্তার ইতিহাস উদ্ঘাটন করিতে হয়, তাহাতেও মৃত্যু সম্বন্ধে কোনও সংশয়রহিত জ্ঞান লাভ হইবে না; তাহার প্রমাণ, মৃত্যুর স্বরূপ সম্বন্ধে মানুষের অজ্ঞতা এ পর্য্যন্ত সমান রহিয়াছে। যত যুক্তি, যত পাণ্ডিত্য, যত সূক্ষ্ম দার্শনিক তর্করীতিই এ বিষয়ে নিয়োজিত কর, কিছুতেই কিছু হইবে না। এই মহা রহস্য-নিকেতনের দ্বারে স্বয়ং মহাকাল ওষ্ঠে অঙ্গুলি স্থাপন করিয়া