পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙালীর অদৃষ্ট
২১৫

করিয়াছে—বলা দুরূহ; কিন্তু ভাবরাজ্যের ভাঙন-প্লাবনের ফলে তাহার অলস কর্ম্মকুণ্ঠ মন ও বৈভব-বিমুখ, স্বাচ্ছন্দ্যলোলুপ প্রাণ যে প্রয়াস-প্রযত্নের পরিচয় দিয়াছে, তাহাতে বাঙালীর সঙ্গন্ধে এমন কথা নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে যে, ভাবজীবনই এই জাতির সত্যকার জীবন; সমাজে বা রাষ্ট্রে সে কোনও রূপে টিঁকিয়া থাকিতে চায়, সেখানে তাহার কোনরূপ আত্মপ্রসারের চেষ্টা নাই, সেখানে তাহার প্রকৃতি অতিশয় স্থিতিস্থাপক—ভাবের ধাক্কা ভিন্ন আর কোনও প্রয়োজনে সে সাড়া দেয় না। এজন্য—অলস, আত্মতৃপ্ত, নিরুৎসাহ, তর্কপ্রিয়, বচন-বিলাসী—প্রভৃতি বিশেষণের সে যথার্থই উপযুক্ত।

 মুসলমান আমলের পূর্ব্বে বাংলা ভাষা বা সাহিত্যের কোনও নিদর্শন নাই। দ্বাদশ বা ত্রয়োদশ শতাব্দী হইতে যখন বাংলা সাহিত্যের উদ্ভব হইল, তখন হইতেই এই জাতির একটা স্বতন্ত্র সত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। ইহার পূর্ব্বে এই জাতির, রক্ত, ভাষা, এমন কি, তাহার বাস্তুসীমান্তের পরিচয় পর্য্যন্ত অনুমানসাপেক্ষ। বৌদ্ধ-প্রভাব ও নবহিন্দুত্বের অভ্যুত্থান প্রভৃতির মধ্য দিয়া এই জাতির প্রকৃতি কেমন ভাবে গড়িয়া উঠিতেছিল; জল, বায়ু, রক্ত ও ভাষার নানা উপাদানে একটা নূতন race-type কেমন করিয়া ক্রমশ গড়িয়া উঠিল; এবং অবশেষে মুসলমান প্রভাবের পীড়নে সেই মিশ্রতরল উপাদানরাশি—যাহা এতকাল কেবল ভাববাষ্পের চাপে নানা আকারে উদ্বেলিত হইয়া উঠিতেছিল—তাহাই কেমন করিয়া শেষে দানা বাঁধিয়া কতকটা জমাট