পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ সমালোচন।
২৯

তাহা দেখেন নাই। কিন্তু অন্যত্রস্থিতা বাসন্তী দেখিতে পাইয়াছিলেন। বাসন্তী তখন উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতে লাগিলেন, “সর্ব্বনাশ হইল, সীতার পালিত করিকরভকে মারিয়া ফেলিল!” রব সীতার কর্ণে গেল। সেই জনস্থান, সেই পঞ্চবটী! সেই বাসন্তী! সেই করিকরভ! সীতার ভ্রান্তি জন্মিল। পুত্ত্রীকৃত হস্তিশাবকের বিপদে বিহ্বলচিত্ত হইয়া তিনি ডাকিলেন, “আর্য্যপুত্ত্র! আমার পুত্ত্রকে বাঁচাও!” কি ভ্রম! আর্য্যপুত্ত্র? কোথায় আর্য্যপুত্ত্র? আজি বার বৎসর সে নাম নাই! অমনি সীতা মূর্চ্ছিতা হইয়া পড়িলেন। তমসা তাঁহাকে আশ্বস্তা করিতে লাগিলেন। এ দিকে রামচন্দ্র লোপামুদ্রার আহ্বানুসারে অগস্ত্যাশ্রমে যাইতেছিলেন। পঞ্চবটী বিচরণ করিবার মানসে সেই খানে বিমান রাখিতে বলিলেন। সে কথার শব্দ মুর্চ্ছিতা সীতার কানে গেল। অমনি সীতার মুর্চ্ছাভঙ্গ হইল—সীতা ভয়ে, আহ্লাদে, উঠিয়া বসিলেন। বলিলেন, “একি এ? জলভরা মেঘের স্তনিতগম্ভীর মহাশব্দের মত কে কথা কহিল? আমার কর্ণবিবর যে ভরিয়াগেল! আজি কে আমা হেন মন্দভাগিনীকে সহসা আহ্লাদিত কলিল?” দেখিয়া তমসার চক্ষু জ্বলে ভরিয়া গেল। তমসা বলিলেন, “কেন বাছা একটা অপরিস্ফুট শব্দ শুনিয়া মেঘের ডাকে ময়ূরীর মত চাকিয়া উঠিলি?” সীতা বলিলেন, “কি বলিলে ভগবতি? অপরিস্ফুট? আমি যে স্বরেই চিনেছি আমার সেই আর্য্যপুত্ত্র কথা কহিতেছেন।” তমসা তখন দেখিলেন, আর লুকান বৃথা—বলিলেন, “শুনিয়াছি মহারাজ রামচন্দ্র কোন শূদ্র তাপসের দণ্ড জন্য এই জনস্থানে আসিয়াছেন।” শুনিয়া সীতা কি বলিলেন? বার বৎসরের পর স্বামী নিকটে, নয়নের পুত্তলীর অধিক প্রিয়, হৃদয়ের শোণিতেরও অধিক প্রিয়, সেই স্বামী আজি বার বৎস-