পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ সমালোচন।
৩৫

কাজ করিয়াছেন। বাসন্তী আরও লেখিলেন যে, যে যশের আকাঙ্ক্ষায় তিনি এই নিষ্ঠুর কার্য্য করিয়াছিলেন, সে আকাঙ্ক্ষাও ফলবতী হয় নাই। তিনি এই প্রকার যশের লাভ লালসার পত্নীবধরূপ গুরুতর অপযশের ভাগী হইয়াছেন। বনমধ্যে সীতার কি হইল, তাহার স্থিরতা কি? ইহার অপেক্ষা গুরুতর অপযশ আর কি হইতে পারে?

 তখন রামের শোকপ্রবাহ আবার অসম্বরণীয় বেগে ছুটিল। সীতার সেই জ্যোৎস্নাময়ী মৃদুমুগ্ধমৃণালকল্প দেহলতিকা কোন হিংস্র পশু কর্ত্তৃক বিনষ্ট হইয়াছে, সন্দেহ নাই। এই ভাবিয়া বাম “সীতে! সীতে!” বলিয়া সেই অরণ্যমধ্যে রোদন করিতে লাগিলেন। কখন বা, যে কলঙ্ককুৎসাকারক পৌরজনের কথায় সীতাবিসর্জ্জন করিয়াছিলেন, তাহাদিগের উদ্দেশে বলিতে লাগিলেন, “আমি অনেক সহ্য করিয়াছি, আমার প্রতি প্রসন্ন হও।” বাসন্তী, ধৈর্য্যবলম্বন করিতে বলিলেন। রাম বলিলেন, “সখি, আবার ধৈর্য্যের কথা কি বল? আজি দ্বাদশ বৎসর সীতাশূন্য জগৎ—সীতা নাম পর্য্যন্ত লুপ্ত হইয়াছে—তথাপি বাঁচিয়া আছি—আবার ধৈর্য্য কাহাকে বলে?” রামের অত্যন্ত যন্ত্রণা দেখিয়া বাসন্তী তাঁহাকে জনস্থানের অন্যান্য প্রদেশ দেখিতে অনুরোধ করিলেন। রাম উঠিয়া পরিভ্রমণ করিতে লাগিলেন। কিন্তু বাসন্তীর মনে সখীবিসর্জ্জন দুঃখ জ্বলিতেছিল—কিছুতেই ভুলিলেন না। বাসন্তী দেখাইলেন;—

অস্মিশ্নেব লতাগৃহে ত্বমভবন্তন্মার্গ দত্তেক্ষণঃ
সা হংসৈঃ কৃতকৌতুকা চিরমভূদ্গোদাবরী সৈকতে।
আয়ান্ত্যা পরিদুর্ম্মনাম্বিতমিব ত্বাং বীক্ষ্য বদ্ধ স্তয়া
কাতর্ধাদরবিন্দকুট্নর্ণানঙ্কোমুগ্ধঃপ্রণামাঞ্জলিঃ।[১]


  1. গীতা গোদাবরী সৈকতে হংস লইয়া কৌতুক করিতে করিতে বিলম্ব করিতেন। তখন তুমি এই লতাগৃহে থাকিয়া