পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যোতিরিক্ষণ Ge$ তাল পড়ল। আমি ছুটে আনতে যাচ্ছি, মাছওয়ালা বাগদী আমাকে বললে—কোথায় যাচ্ছেন বাবা ? যাবেন না। জঙ্গলের মধ্যে সাপখোপ আছে। এখন বিকেলে রোদ নেই, দেখতে পাবেন না। আর তাল নিয়ে বইবেন কেমন করে ? সে কথা ঠিক । বইব কি করে অত বড় তালটা সে কথা ভেবে দেখি নি। তাল পড়বার শব্দ হলেই দৌড়নো চাই। তখন আরও মনে পড়ল আমাদের পুকুরধারেই জ্যাঠামশায়দের তালগাছ থেকে আজই সকালে দুটো বড় বড় তাল কুড়িয়ে এনেছি। গিয়ে আরও কত কুড়োবো। কি হবে এখান থেকে তাল বয়ে নিয়ে গিয়ে ? রাস্তার দু-ধারে খালি বনজঙ্গল। এক জায়গায় বুনো করমচা পেকে আছে দেখে তুলতে যাচ্ছি, আমার সঙ্গী বারণ করলে—যেও না যেও না। ও তুলে না— —কেন ? —কেন আবার | বাড়ী থেকে সদ্য বেরিয়েছ ছেলেমাহুষ । ও ফল থেলি হাড়ের জর এখুনি টেনে বের করে এনে ফ্যালবে। —আমাদের বাড়ীতে তো কত খায়। —খায় রোধে । কাচা কেউ খায় বলতি পার ? ওর ওপর আমার বড় রাগ হল । ও কি আমার অভিভাবক, যা করতে যাচ্ছি তাতেই বাধা দিচ্ছে ? তাল কুডুতে দেবে না, করমচা খেতে দেবে না, ভাল রে ভাল! তুমি তোমার পথে যাও, আমি আমার পথে যাই। আমি ওকে বললাম—বনগা কতদূর হবে ? —এইবার চাপাবেড়ে ছাড়ালি তবে বনগী । —তোমার বাড়ী কোথায় ? —সাতবেড়ে । দূর থেকে একটা সাদা কোঠাবাড়ী চোখে পড়ছে। ওই হল বনগা শহর। আমার মন আনন্দে ও ঔৎস্থক্যে চঞ্চল হয়ে উঠল। না জানি কত কি জিনিস এখুনি চোখে পড়বে। কত বড় শহর বনগী ! কি বড় বড় বাড়ী ! শহরে ঢুকে দু পাশে দেখতে দেখতে চললাম। মাছওয়ালা বাঙ্গী তখনও আমার সঙ্গ ছাড়ে নি ; সে বললে, চলুন, আপনি ছেলেমানুষ, আমি পণ্টঘর আপনাকে দেখিয়ে দিই।– আমি যদি তখন তার সদুপদেশ শুনতাম ! যাগ গে । আমি তখন ওর ওপর ভয়ানক বিরক্ত হয়ে উঠেছি। আমি এসেছি বেড়াতে, বাবার আর মার শাসন থেকে দূরে। আমি এখানে বা খুশি তাই করব। তুমি কে হে বাপু সব সময়ে আমার পেছনে লেগে আছ ? আমার গরু আমি নিই না-নিই সে আমার খুশি । পন্টে গিয়ে গরু পেলেই আমায় এখুনি গরু নিয়ে বাড়ী ফিরতে হবে, আমি একটু বেড়িয়ে দেখতে পারব না। আমি এসেছি শহর বেড়িয়ে দেখতে । কpল সত্যিই আমায় ছেড়ে এবার অন্য দিকে চলে গেল ! আমি আজ বাড়ী ফিরব না । তুমি যাও।