পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ১৩৩ জনহীন বনের ধারে কতকগুলি উচুনীচু সদাচঞ্চল বাঁকা রেখার সস্টি করিবে । সিংহেরা দল পাকাইয়া ছোট কণ্টকবক্ষের এতটুকু ক্ষুদ্র ছায়ায় গোলাকারে দাঁড়াইয়া অগ্নিবন্টি হইতে আত্মরক্ষা করে—পাক ন্যাশনাল আলবাত" wild celery-র বন••• কিন্তু খোকা যে টানিতেছে আজকাল, কোনও জায়গায় যাইতে মন চায় না খোকাকে ফেলিয়া। কাজল, খোকা, কাজল, খোকা, খোকন, ও ঘড়ি উড়াইতে পারে না, কিছর বঝিতে পারে না, কিছু পারে না, বড় নিবোধ । কিন্তু ওর আনাড়ি মুঠোতে বকের তার অাঁকড়াইয়া ধরিয়াছে। টানিতেছে, প্রাণপণে টানিতেছে—ছোট্ট দ্বল হাত দটি নিন্দয়ভাবে মাচড়াইয়া সরাইয়া লওয়া ? সাবনাশ ! ধামা-চাপা থাকুক বিদেশযাত্রা। ট্রেন হু-হ চলিতেছে-“মাঝে মাঝে আম বন, জলার ধারে লালহাঁস বসিয়া আছে, আখের ক্ষেতে জল দিতেছে, গম কাটিতেছে। রেলের ধারের বস্তিতে উদখলে শস্য কুটিতেছে, মহিষের পাল চরিয়া ফিরিতেছে । বড় বড় মাঠে দােপর গড়াইয়া গিয়া ক্ৰমে রোদ পড়িয়া আসিল। দরে দরে চক্ৰবালসীমায় এক-আধটা পাহাড় ঘন নীল ও কালো হইয়া উঠিতেছে। কি জানি কেন আজ কত কথাই মনে পড়িতেছে, বিশেষ করিয়া নিশ্চিন্দিপুরের কথা । হয়ত এতকাল পরে লীলাদির সঙ্গে দেখা হওয়ার জন্যই । ঠিক তাই । বহু দরে আর একটি সক্ষপণ অন্য ধরণের জীবন-ধারা, বশিবনের আমবনের ছায়ায় পাখির কলকাকলীর মধ্য দিয়া, জানা-অজানা বনপপের সবাসের মধ্য দিয়া সখে-দঃখে বহুকাল আগে বহিত—এককালে ষার সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল তার—আজ তা সবপ্ল—সবপ্ন, কতকাল আগে দেখা স্বপ্ন ! গোটা নিশ্চিন্দিপুর, তার ছেলেবেলাকার দিদি, মা ও রানীদি, মাঠ বন, ইছামতী সব অপটি হইয়া গিয়াছে, ধোঁয়া ধোঁয়া মনে হয়, স্বপ্নের মতই অবাস্তব । সেখানকার সব কিছুই অস্পষ্ট সমতিতে মাত্র আসিয়া দড়িাইয়া গিয়াছে। এই তো ফাল্গুন-চৈত্র মাস—সেই বাঁশপাতা ও বাঁশের খোলার রাশি—শৈশবের ভাঙা জানালাটার ধারে বসিয়া বসিয়া কতকাল আগের সে সব কল্পনা, আনন্দপণে দিনগুলি, শীতরাত্রির সুখপশ কাঁথার তলা,—অনন্ত কালসমুদ্রে সে সব ভাসিয়া গিয়াছে, কত কাল আগে।-- কেবল সবপ্নে, এক একদিন যেন বাল্যের সেই রাপো চৌকিদার গভীর রাত্রের ঘামের মধ্যে কড়া হাঁক দিয়া যায়—ও রায় ম—শ—য়—য়, সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিশিদপরে ফিরিয়া আসে, আবার বাড়ির পাশেই সেই পোড়ো ভিটাতে বহুকাল আগের বসন্ত নামে, প্রথম চৈত্রের নানা জানাঅজানা ফুলে বনভূমি ভরিয়া যায়, তাহাদের পরানো কোঠাবাড়ির ভাঙা জানালার ধারে অতীত দিনের শত সুখদঃখে পরিচিত পাখির দল কলকণ্ঠে গান গাহিয়া উঠে, ঠাকুরমাদের নারিকেল গাছে কাঠঠোকরার খুদ বিচিত্র গোপনতায় তন্দ্রারত হইয়া পড়ে--'স্বপ্নে দশ বৎসরের শৈশবটি আবার নবীন হুইয়া ফিরিয়া আসে... এতদিন সে বাড়িটা আর নাই•••কতকাল আগে ভাঙিয়া-চুরিয়া ইট কাঠ স্তপোকার হইয়া আছে—তাহাও হয়তো মাটির তলায় চাপা পড়িতে চলিলু—সেই শৈশবের জানালাটার কোনও চিহ্ন নাই—দীঘদিনের শেষে সোনালী রোদ যখন বনগাছের ছায়া দীঘfতর করিয়া তোলে, ফিঙে-দোয়েল ডাক শুরু করে—তখন আর কোনও মুগ্ধ শিশ জানালার ধারে বসিয়া থাকে না-হাত তুলিয়া অন্যযোগের সরে বলে না-আজ রাত্রে যদি মা ঘরে জল পড়ে, কাল কিন্তু ঠিক রাণ দিদির বাড়ি গিয়ে শোবো—রোজ রোজ রাত জাগতে পারি নে বলে দিচ্ছি। অপর একটা কথা মনে হইয়া হাসি পাইল । গ্রাম ছাড়িয়া আসিবার বছরখানেক আগে অপর একরাশ কড়ি পাইয়াছিল। তাহার বাবা শিষ্যবাড়ি হইতে এগুলি আনেন। এত কড়ি কখনও অপ, ছেলেবেলায় একসঙ্গে দেখে নাই। তাহার মনে হুইল সে হঠাৎ অত্যস্ত বড়লোক হইয়া গিয়াছে—কড়ি খেলায় সে যতই হারিয়া