পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3२२ বিভূতি-রচনাবলী পর হইয়া আজ তাহার বিধয়েতে যত খুঁটিনাটি আন্তরিক অগ্রহে প্রশ্ন করিলেন, জ্যাঠাইম কোনও দিন তাহা করিয়াছেন ?... বাসায় ফিরিয়া কেবলই লীলার কথা ভাবিল। তাছার মনের যে স্থান লীলা দখল করিয়া আছে ঠিক যে স্থানটিতে আর কেহই তো নাই! কিন্তু সে এ লীলা নয়। সে লীলা স্বপ্ন হইয়া কোথায় মিলাইয়া গিয়াছে—আর কি তাহার দেথা মিলিবে কোনও কালে ? সে ঠিক বুঝিতে পারিল না—আজকার সাক্ষাতে সে আনন্দিত হইয়াছে কি বাথিত হইয়াছে। বুধবারের পার্টির জন্য সে টুইল শার্টট সাবান দিয়া কাচিয়া লইল। ভাবিল, নিজের যাহা আছে তাঁহাই পরিয়া যাইবে, চাহিবার চিন্তিবার আবশ্বক নাই। তবুও যেন বড় হীনবেশ হইল। মনে মনে ভবিল, হাতে যখন পয়সা ছিল, তখন লীলার সঙ্গে দেখা হ’ল না—আর এখন একেবারে এই দশা, এখন কিনা— ! লীলার দাদামশায় মিঃ লাহিড়ী খুব মিশুক লোক। অপুকে বৈঠকখানায় বসাইরা খানিকটাগল্পগুজব করিলেন। লীলা আসিল, সে ভারি ব্যস্ত, একবার দু-চার কথা বলিয়াই চলিয়া গেল। কোনও পার্টিতে কেহ কখনও তাঁহাকে নিমন্ত্রণ করে নাই। যখন এক এক করিয়া নিমন্ত্ৰিত ভদ্রলোক ও মহিলাগণ আসিতে আরম্ভ করিলেন, তখন অপু খুব খুশী হইল। কলিকাতা শহরে এ রকম ধনী উচ্চশিক্ষিত পরিবারে মিশিবার সুযোগ—এ বুঝি সকলের হয় ? ಕ್ಲ গল্প করিবার মত একটা জিনিস পাইয়াছে এতদিন পরে । মা শুনিয়া কি খুবই যে হুহবে | বৈঠকখানায় অনেক সুবেশ যুবকের ভিড়, প্রায় সকলেই বড়লোকের ছেলে, কেহ বা নতুন ব্যারিস্টারী পাশ করিয়া আসিয়াছে, কেহ বা ডাক্তার, বেশীর ভাগ বিলাত-ফেরত। কি লইয়৷ অনেকক্ষণ ধরিয়া উর্ক হইতেছিল। কর্পোরেশন ইলেকৃশন লইয়া কথা কাটাকাটি। অপু এ বিষয়ে কিছু জানে না, সে একপাশে চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। পাড়াগায়ের কোন একটা মিউনিসিপ্যালিটির কথায় সেখানকার নানা অসুবিধার কথাও উঠিল। একজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোক, মাথায় কাচাপাক চুল, চোখে সেনা-বাধানে চশমা, একটু টানিয়া টানিয়া কথা বলিবার অভ্যাস, মাঝে মাঝে মোটা চুরুটে টান দিয়া কথা বলিতেছিলেন—দেখুন মিঃ সেন, এগ্রিকালচারের কথা যে বলছেন, ও শখের ব্যাপার নয়—ও কাজ আপনার আমার নয়, ইট্‌ মাস্ট বি ব্রেড, ইন্‌ দি বোন—জন্মগত একটা ধাত গড়ে না উঠলে শুধু কলের লাঙ্গল কিনলে ও হয় না— প্রতিপক্ষ একজন ত্রিশ-পয়ত্রিশ বৎসরের যুবক, সাহেবী পোশাক-পর, বেশ সবল ও সুস্থকায়। তিনি অধীরভাবে সামনে ঝুঁকিয়া বলিলেন—মাপ করবেন রমেশবাবু, কিন্তু একথার কোনও ভিত্তি আছে বলে আমার মনে হয় না। আপনি কি বলতে চান তা হ’লে এডুকেশন, অর্গ্যানিজেশন, ক্যাপিটাল-এসবের মূল্য নেই এত্রিকালচারে ? এই যে— —আছে, সেকেণ্ডাৰী—