তৃণাস্কুর సెs সময় দরজায় শব্ব শুনে খুলে দেখি নীরদবাবু। তার গাড়ি নীচেই দাড়িয়েছিল—দুজনে উঠে একেবারে দমদমায় মুশীলবাবুর বাগানে। সত্যি, ওদের সাহচর্য এত মুন্দর লাগে আমার —সত্যিকার প্রাণবন্ত সজীব মন ওদের । সেখানে বাইরের মাঠে চেয়ার পেতে বসে নানা বিষয়ের আলোচনা হল—চা-পান সমাপন হল। শাস্তিনিকেতন থেকে অমিয় চক্রবর্তী ‘পথের পাচালী সম্বন্ধে লিখেচেন, ‘বই পড়ে গ্রামখানি দেখতে ইচ্ছা হয়—আর লিখেচেন, ‘শিল্পীর স্বঃ গ্রামখনি শাশ্ব ওকালের, জানি না ভৌগোলিক গ্রামখানা কি রকম দেখবো।’ ছটার সময় নীরদবাবুর গাডি করে ফিরলুম—কারণ রবিবাসর ছিল প্রেমোৎপলবাবুর বাড়িতে। আজ খুব মেঘ করেছে, দমদম থেকে আসতে মেঘান্ধকার পূর্ব-আকাশের দিকে চেয়ে আমার পুরনো ভিটা ও বাশবনের কথা, মায়ের কড়াথানার কথা ভাবছিলুম—কি অদ্ভুত প্রেরণাই দিয়েচে এর জীবনে—সত্যি ! নীরদবাবুও গাড়িতে বললেন, কড়াথানার দৃষ্ঠা তাকে সেদিন একটা অদ্ভুত উত্তেজনা ও অনুভূতি এনে দিয়েছিল মনে—গত রবিবারে সেদিন যখন ওঁরা ওখানে গিয়েছিলেন। তারপর এলুম রবিবাসরে, ওখানে তখন প্রবন্ধ পাঠ শেষ হয়ে গিয়েচে—তরমুজের আইসক্রিম ও খাবার খুব খাওয়া গেল। অতুলবাবুর কাছে একটা Spiritual Circle-এর ঠিকানা নিলুম। নীরদ আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমহাস্ট স্ট্রীটের মোড় পর্যন্ত এল—অশোকবাবু ও সজনীবাবুদের সম্বন্ধে নানা কথা । সুধাংশুবাবুর সঙ্গে দেথা হল, তিনি যাচ্চেন স্ববোধবাবুর পিতৃ-শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণে। বাড়ি চলে এলুম। আজ ভাবচি, গ্রাম সম্বন্ধে একটা সত্যকার ভালবাসা ও টান ছিল শৈশব থেকে আমার মনে । কি চোখেই দেখেছিলুম বারাকপুরটাকে—যখন প্রথম মামার বাড়ি থেকে অনেককাল পরে দেশে ফিরি, পিসিমা ওই দিকের বশবাগান দিয়ে আসেন। কাল তাই যখন শাখারীটোলার দখল-কর বাড়িটার সামনে পুরনো জমিদারী কাগজের মধ্যে ১৩১০ সালের একখানা পুরনো চিঠি কুড়িয়ে পেলাম, তখনি মনে হল,—আচ্ছা এমনি দিনে দশ বৎসরের ক্ষুদ্র বালক আমি কি করছিলাম! মনে একটা thrill হল, একটু নেশা-মত যেন!...কোনো সত্যিকার জিনিস মিথ্যে হয় না—সেই বেচু চাটুয্যের স্ট্রীটের মধ্যে দিয়ে আজ দুপুরে নীরদবাবুর গাড়ি করে গেলাম, যে বেচু চাটুয্যের স্ট্রীটের বাড়িতে একদিন কত কষ্টে কালযাপন করেচি ! ওখানেই কষ্ট পেয়েচি, ওখানেই ভগবান মুখ দিলেন। সত্যিকার অনুভূতি অমর, তা বৃথা যায় না—আমার শৈশব-মনের সে জীবন্ত, প্রাণবান ভালবাসা, গ্রামের প্রতিটি বাশের-খোল ও গাবগাছটাকে অতি নিকটে আপনার জন বলে ভাববার অনুভূতি ছিল সত্যিকার জিনিস—তাই আজ বহু সমঝদার মনে, সে অঙ্গভূতিটুকু সঞ্চার করতে কৃতকার্য হয়েচি । সাহিত্য-স্থষ্টি মেকুঁী জিনিস নয়, তার পিছনে যখন সত্যকার প্রেরণ না থাকে, একটা বড় অনুভূতি বা দৃষ্টি বা ভালবাসা না থাকে—সেটা কখনোই বড় সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে না-খুব কলাকৌশল হয়তো দেখানো চলতে পারে, খুব cloverness-এর পায়তারা ভাজা যেতে পারে হয়তো, কিন্তু তা সত্যিকার বড় জিনিল হয়ে উঠতে পারে না কোনো কালেণ্ড ।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/8/88/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%A4%E0%A6%BF_%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu/page225-1024px-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%A4%E0%A6%BF_%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu.jpg)