পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক ○8〉 মেয়েটি আমার হাত থেকে সেখান নিয়ে নম্ৰমুখে একটু হাসলে। তারপর আমাদের থালা ও কাপগুলি নিয়ে চলে গেল। গুরুমশায় উচ্ছসিত হয়ে বলেন—বইখানা দিয়ে দিলেন ? বেশ ভালো নতুন বইখানা— অমন বই ও পেয়ে বড় খুশী হয়েচে । এ গায়ে ওসব কে দেবে বলুন । আমরা গুরুমশায়ের বাড়ি থেকে যখন বার হয়ে পথে পড়লুম তখন বেশ অন্ধকার হয়েচে, বাড়ির সামনে বাতাবী লেবু গাছের ডালে জোনাকি জলচে । গুরুমশায় বললেন—চলুন আপনাদের এগিয়ে দিই। ট্রেনের এথনো দেরি আছে—সাড়ে আটটায়—আমাদের আডডাটা দেখে যাবেন না একবার ? কলকাতায় ক্লাব আছে, সিনেমা আছে, ফুটবল আছে, এখানে লোকে অবসর সময় কি করে কাটায় জানবার আগ্রহ অত্যন্ত বেশি ছিল আমার । একটা নীচু চালাঘরের সামনে গিয়ে গুরুমশায় বললেন—দেখবেন নাকি ? আমুন না ? ঘরের মাটির মেঝেতে আগাগোড়া মাদুর পাতা । জন চারেক লোক বসে আছে মাছরের ওপর, একজন হু কোতে তামাক টানচে। আর তিন জন লোক একেবারে চুপচাপ বসে। আশ্চর্য এই যে, এরা কথাবার্তা বলতে এসে এমনধারা চুপচাপ বসে আছে! একজন আমার দিকে চেয়ে বললে—কোখেকে আসা হচ্চে ? গুরুমশায় বললেন—ওঁরা কলকাতা থেকে এসেচেন আমাদের দেশ দেখতে, তাই আমার ওখানে— —বেশ বেশ, বসুন। তামাক চলে ? চলে না । তা বেশ– কথাবার্তার ইতি। এ মজলিসে কেউ কথা বলে না দেখচি। আরও তিন চার জন লোক ঢুকলো—একজন বললে—তেঁতুল কি দর বিক্রি করলে চকৃত্তি ? যে লোকটি ইকো টানছিল, সে উত্তর দিলে—বিক্রি করিনি। সাড়ে সাতটাকা পর্যন্ত উঠলো, আর উঠলো না । সামনের হাটে আবার দেখি— বেশ লাগলো ওদের এই গ্রাম্য কথা । কথাও যদি বলে তো বেশ লাগে ! এ যেন কাশ্মীর ভ্রমণের চেয়েও কৌতুহলপ্রদ; যদিও কখনো কাশ্মীর ভ্রমণ করিনি, বলতে পারিনে তার আনন্দ কি ধরনের। আর একজন বললে—আর একবার কুতুবপুরে যাই, মেয়েটার একটা সম্বন্ধ জুটেচে–পাত্র কুতুবপুরের কাছারিতে নায়েবি করে— —কুতুবপুরেব নায়েব ? হা হা, দেখে এসো, বেশ ছেলেটি, বয়েস বেশি না— এই সময় একজন ঘরে ঢুকে সকলের সামনে কলার পাতায় মোড়া কি একটা জিনিস রাখলে। সবাই বুকে পড়লো। এসো হরিশ,কি, কি হে এতে ? আগম্ভক লোকটি হাসিমুখে বললে—থাও না, স্থাখে না কি। বাড়ির গাছে কথবেল পেকেছিল, তারই আচার—বলি, যাই আড্ডার জন্তে একটু নিয়ে যাই— সকলেই ঝুকে পড়লো কলার পাতার ওপর। আমাদের হাতেও ওরা একটু তুলে দিলে জিনিসটা । আমাদের কোন আপত্তি টিকলো না।