পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক శ్రీ" ! চেয়ে দেখি কয়েকজন লোক লণ্ঠন জেলে এইদিকেই আসচে। তাদের হাতে বড় বড় লাঠি । আমাকে দেখে বিস্ময়ের স্বরে বললে—এখানে কি করেন বাবু এত রাত্রে ? আমি বললুম—এই বসে আছি। তারা দস্তুরমত অবাক হয়ে গেল । বললে—এখানে এক বসে আছেন । বাড়ি কোথায় বাবুর ? —কলকাতায়— —আমরাও তাই ভেবেচি, বিদেশী লোক । —কেন বল তো ? —বাবু, এখানকার কোনো লোক এখানে এই সময় এক বসে থাকবে ? বিদেশী লোক আপনি, কিছুই জানেন না, তাই দিব্যি বসে আছেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বড় বাঘের ভয় । বিশেষ করে এই যে ঝরনার ধারে আপনি বসে আছেন, সন্ধ্যার পরে বাঘে এখানে জল থেতে নামে । প্রতি বছর দু-তিনটি মানুষকে বাঘে নিয়ে থাকে চন্দ্রনাথে। আপনি এখন আমাদের সঙ্গে চলুন— —কোথায় যাবেন আপনারা ? —আমরা চন্দ্রনাথের মন্দিরে আরতি করতে যাচ্চি, এই দেখুন আমরা চারজন লোকে আলো নিয়ে লাঠি নিয়ে যাচ্চি—রাত্রে ফিরবো না। সকালে পাহাড় থেকে নেমে আসবে —আপনিও চলুন, এক গায়ে যাবেন না এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। আমি তাদের সঙ্গে যেতে রাজি হয়ে গেলুম। বন পাহাড়ের নৈশ সৌন্দর্য উপভোগ করবার এ সুযোগ কি ছাড়া যায় ! তবে আমি ওদের বললুম, যার বাড়ি উঠেচি, সন্ধ্যার পরে না ফিরলে তিনি খুব ভাববেন। তারা বললে—আপনার কোনো বিপদ ঘটলে তাকে আরও বেশি ভাবতে হবে, আপনি চলুন। ওদের সঙ্গে উঠতে উঠতে একবার পিছনে ফিরে চেয়ে দেখলুম-দূরের সমুদ্র জ্যোৎস্নালোকে অতি অস্পষ্ট দেখা যায়, সমুদ্র বলে মনে হয় না, সমুদ্র হতে পারে, মাঠও হতে পারে। _ সেই বিশাল বনস্পতিদের তলা দিয়ে পথ, জ্যোৎস্নার আলো সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি, রীতিমত অন্ধকার । আর, কি জোনাকির মেলা ! অন্ধকারে বনের মধ্যে জোনাকির এমন ঘোরাফের, এমন ওঠানামা, এমন মেলা আর কখনো দেখেচি বলে মনে হয় না। লক্ষ লক্ষ জোনাকির সে কি বিচিত্র সমারোহ। আরণ্য প্রকৃতিকে ধিনি ভালোবাসেন, তিনি এই ধরনের অন্ধকার রাত্রে গভীর বনের মধ্যে গিয়ে যদি অরণ্যের নৈশরূপ না দেখে থাকেন, তবে তিনি একটি অদ্ভুত সৌন্দর্যময় অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত আছেন জীবনে। বড় বড় গাছের গুড়ি অন্ধকারে দৈত্যের মতো দাড়িয়ে, মাথার ওপর শাখাপ্রশাখার অন্ধকার চন্দ্ৰাতপ,মাঝে মাঝে এক-আধটু ফাক দিয়ে আকাশ চোখে পড়ে। সে আকাশকে ঠিক তারা-ভরা বলা চলে না, কারণ, জ্যোৎস্নালোকে নক্ষত্রের ভিড় অনেক পাতলা হয়ে গিয়েচে । তবুও বহু নক্ষত্র দেখা যায় ডালপালার ফাকে। दि. ब्र २-२e