পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাইবে দেড় টাকা যে, প্রতি শনিবার তো দূরের কথা, মাসে অন্তত একবারও বাড়ি যাইবে ? জলখাবারের পয়সা বাচাইয়া আনা আষ্টেক পয়সা হইয়াছে, আর একটা টাকা হইলেই— বাড়ি। হয়ত এক টাকা জমিতে জমিতে গরমের ছুটিই বা আসিয়া যাইবে, কে জানে ? পরদিন স্কুলে হৈ হৈ ব্যাপার। দেবব্রত যে লুকাইয়া কাহাকেও না বলিয়া বাড়ি চলিয়া গিয়াছিল এবং রবিবার রাত্রে লুকাইয়া বোর্ডিং-এ চুকিয়াছে, সে কথা কি করিয়া প্রকাশ হইয়া গিয়াছে। বিধুবাবু মুপারিন্টেণ্ডেণ্ট—সে কথা হেডমাস্টারের কানে তুলিয়াছেন। ব্যাপারের গুরুত্ব বুঝিয়া সমীরের প্রাণ ভয়ে উড়িয়া গেল, সে-ই যে জানালার ভাঙা গরাদে খুলিয়া দেবব্রহকে তাঁহাদের ঘরে ঢুকাইয়া লইয়াছে, সে কথা হেডমাস্টার জানিতে পারিলে কি আর রক্ষা থাকিবে সমীর রমাপতির ঘরে গিয়া অবস্থাটা বুঝির আসি। দেবব্রত নিজেই সব স্বীকার করিয়াছে, সাক্ষ্য প্রমাণের প্রয়োজন হয় নাই, কিন্তু সমীরের জানালা খুলিয়া দেওয়ার কথা কিছুই বলে নাই। বলিয়াছে, সে সোমবার খুব ভোরে চুপি চুপি লুকাইয়া বোর্ডিং-এ চুকিয়াছে, কেহ টের পায় নাই। স্কুল বসিলে ক্লাসে ক্লাসে হেডমাস্টারের সাকুলার গেল যে, টিফিনের সময় স্কুলের হলে দেবব্রতকে বেত মারা হইবে, সকল ছাত্র ও টিচারদের সে সময় সেখানে উপস্থিত থাকা চাই । সমীর গিয়া রমাপতিকে বলিল, আপনি একবার বলুন না রমাপতিদা হেডমাস্টারকে, ও ছেলেমানুষ, থাকতে পারে না বাড়ি না গিয়ে, আপনি তো জানেন ও কি রকম home-wick ? মিথ্যে মিথ্যে ওকে তিন শনিবার ছুটি দিলে না সেকেন মাস্টার, ওর কি দোষ ? উপর-ক্লাসের ছাত্রদের ডেপুটেশনকে হেডমাস্টার স্থাকাইয়া দিলেন। টিফনের সময় সকলে হলে একত্র হইলে দেবব্রতকে আনা হইল। ভয়ে তাহার মুখ শুকাইয়া ছোট হইয়া গিয়াছে। হেডমাস্টার বজ্ৰগম্ভীর স্বরে ঘোষণা করিলেন যে, এই প্রথম অপরাধ বলিয়া তিনি শুধু বেত মারিয়াই ছাড়িয়া দিতেছেন নতুবা স্কুল হইতে তাড়াইয়া দিতেন —ীতিমত বেত চলিল। কয়েক ঘা বেত খাইবার পরই দেবব্রত চীৎকার করিয়া কাদিয়া উঠিল। হেডমাস্টার গর্জন করিয়া বলিলেন, চুপ! bend this way, bend ! মার দেখিয়া বিশেষ করিয়া দেবব্রতের কান্নার অপুর চোখে জল আসিয়া গেল। মনে পড়িল, লীলাদের বাড়ি এই রকম যার একদিন সেও থাইয়াছিল বড়বাবুর কাছে, সেও বিনা দোষে। অপু উঠিয়া বারান্দায় গেল। ফিরিয়া আসিতে সমীর ধমক দিয়া চুপি চুপি বলিল, छूहे ও-রকম কাদছিস্ কেন অপূর্ব ? থাম্ না—হেডমাস্টার বকবে— সরস্বতী পূজার সময় তাহার আট আনা দা ধরাতে অপু বড় বিপদে পড়িল। মাসের শেষ, হাতেও পয়সা-তেমন নাই, অথচ সে মুখে কাহাকেও ‘না বলিতে পারে না, সরস্বতী পূজার চাদ দিয়া হাত একেবারে খালি হইয়া গেল। বৈকালে সমীর জিজ্ঞাসা করিল, খাবার খেতে গেলি নে অপূর্ব ? - সে হাসিয়া ঘাড় মাড়িল।