পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের ডস্ক বাজে ఫిa অ।-চিন বল্লেন—কামরা আপনাদের পছন্দ হয়েছে তো ? সুরেশ্বর বল্লে—মুন্দর সাজানো কামরা। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আ-চিন গম্ভীর ভাবে বল্পেন—ধন্যবাদ আপনাদের। আমাদের বিপন্ন দেশকে দয়া করে আপনার সাহায্য করবার জন্যে এত কষ্ট স্বীকার করে অজানা ভবিষ্যতের দিকে চলেছেন । ভগবান বুদ্ধের দেশের লোক আপনারী—সব সময়েই আপনার আমাদের নমস্ত। ভগবান বুদ্ধের আশীৰ্ব্বাদ আপনাদের ওপর বর্ষিত হোক। স্বরেশ্বর বল্লে—আপনি তো সঙ্গে যাবেন না—এ নেীকে ঠিক জায়গায় আমাদের নিয়ে যাবে তো ? —সে বিষয় ভাববেন না। এ চীন গবর্নমেন্টের বেতনভোগী জাঙ্ক । তিন দিন পরে একখানা চীনা জাহাজ আপনাদের তুলে নেবে। কাবণ সামনে দুস্তর চীন সমুদ্র। জাঙ্কে সে সমূদ্র পার হওয়া তো যাবে না। আ-চিন বিদায় নেবার পরে নৌকা নোঙব ওঠালে। জাঙ্কের সুসজ্জিত কামরায় মোমবাতির আলো জলছে। অনুকূল বায়ুভরে চীন সমুদ্র বেয়ে নৌকা চলেছে—ম্বন অন্ধকার, কেবল আলোকোৎক্ষেপক ঢেউগুলি যেন জোনাকির বাকের মত জলছে । বিমল বল্পে—এখান থেকে হংকং সতেরোশো আঠরোশো মাইল দূর। একে ভীষণ চীনসমূদ্র—আর এই জাঙ্ক তো এখানে মোচার খোলা। প্রাণ নিয়ে এখন ডাঙ্গায় পা দিতে পারলে হয়। সুরেশ্বর বল্লে—এসে ভাল করনি, বিমল। বোকের মাথায় তখন দুজনেই আ-চিনের কথায় ভুলে গেলুম কেমন—দেখলে ? এই জাঙ্কে যদি তোমায় আমায় খুন করে এরা জলে ভাসিয়ে দেয়, এদের কে কি করবে ? কেউ জানে না আমরা কোথায় আছি। কেউ একট। খোজ পৰ্য্যস্ত করবে না । বিমল বল্লে—ও সব কথা ভেবে কেন মন খারাপ কর । বাইরে গিয়ে সমূত্রের দৃশ্বট একবার দেখ। ফসফোরেসেণ্ট ঢেউগুলো কি চমৎকার দেখাচ্চে ? মাঝে মাঝে কেমন একপ্রকার শব্দ হচ্ছে সমুদ্রের মধ্যে । ওগুলো কি ? ওরা কাউকে কিছু বলতে পারে না, ইংরাজি ভাষা কে জানে নৌকায়, তা ওদের জানা নেই। রাত্রে ওদের ঘুম হোল না। ক্রমে পুর্বদিক ফর্স হয়ে এল, রাত ভোর হয়ে গেল। একটু পরে স্থৰ্য্য উঠল। সকাল থেকে নৌকা ভয়ানক নাচুনি ও দুলুনি শুরু করে দিল। চীন সমুদ্র অত্যন্ত বিপজ্জনক, সৰ্ব্বদা চঞ্চল, ঝড় তুফান লেগেই আছে। ওরা সমুদ্রপীড়ায় কাতর হয়ে কামরার মধ্যে ঢুকে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। আহার বিহারে রুচি রইল না। সেদিন বিকেলে এক মস্ত ঢেউয়ের মাথায় একটি কাটল ফিশ এসে পড়ল জাঙ্কের পাটাতনে। সেট তখনও জ্যাস্ত, পালাবার আগেই চীনা মাঝিরা ধরে ফেললে । জাঙ্কে যা খাবার দেয়, সে ওদের মুখে ভাল লাগে না। ভাত ও স্ব টুকি মাছের তরকারী। সমুদ্রপীড়ায় আক্রান্ত দুটি বাঙালী ধাত্রীর পক্ষে চীনা ভাত তরকারী খাওয়া প্রায় অসম্ভব।