পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

સ્વ88 বিভূতি-রচনাবলী এমন সময় বৌটি বাট শেষ করে চলে গেল। কিন্তু বোধ হয় পাঁচ মিনিট পরেই আবার এলো। দেখে মনে হ’ল সে যেন খুব ব্যস্ত, উদ্বিগ্ন, উত্তেজিত । এবারও সে কুঠরির মধ্যে ঢুকে এটা ওটা সরাতে লাগলো এবং আমার দিকে চাইতে লাগলো, তারপর হঠাৎ রান্নাচালার দরজায় এসে চকিতদৃষ্টিতে চারদিক চেয়ে কেউ নেই দেখে আমার দিকে আরও সরে এলো এবং নিচুম্বরে বললে, “ঠাকুরমশায়, আপনি এখনই এখান থেকে পালান, না হলে আপনি ভয়ানক । বিপদে পড়বেন—এরা ফাকুড়ে ডাকাত, রাতে আপনাকে মেরে ফেলবে”—বলেই চট করে বাড়ীর মধ্যে চলে গেল । শুনে তো আর আমি নেই ! হাতের খুস্তি হাতেই রইলো, সমস্ত শরীর দিয়ে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল—আর সারা হাত-পা অবশ ও ঝিমঝিম করতে লাগলো ৮ বলে কি ! দিব্যি গেরস্তবাড়ী, গোলাপাল, ঘরদোর—ডাকাত কি রকম ? কিন্তু পালাবোই বা কেমন করে ? এখন বেশ রাত হয়েচে। সামনের চণ্ডীমণ্ডপে বৃদ্ধ বসে লোকজনের সঙ্গে কথা কইচে—ওখান দিয়ে যেতে গেলেই তো সন্দেহ করবে ! কাঠের মতো আড়ষ্ট হয়ে গিয়েচি একেবারে—হাতে পায়ে জোর নেই, কিছু ভাববারও শক্তি লোপ পেয়েচে । মিনিট পাচেক এমনি ভাবে কাটলো—এমন সময়ে দেখি সেই বৌটি আবার কি-একটা কাজে কুঠরির মধ্যে ঢুকে খোলা দরজা দিয়ে আমার দিকে চেয়ে দাড়িয়ে রইল। মেয়েটি কথা বলবার পূৰ্ব্বে ই আমি বললুম, “তুমি ষে হও, তুমি পরম দয়াময়ী—বলে দাও কোন পথে কি ভাবে পালাবে1•••” বৌটি চাপা গলায় বললে, “সেই জন্যেই এলুম। সব দেখে এলুম। পালাবার পথ নেই— ওর। ঘাটি আগলে রেখেচে...” আমি বললুম, “তবে উপায় ।” মেয়েটি বললে, “একটা মাত্র উপায় আছে। তাও আমি ভেবে এসেচি। আমি এ-বাড়ীতে আর ব্ৰহ্মহত্যা হ’তে দেব না—অনেক সহ করেচি, আর করবো না – দাড়ান ঠাকুরমশায়, আর একবার বাড়ীর মধ্যে থেকে আসি, নইলে সন্দেহ করবে।” মিনিট পাচেক পরে বৌটি আবার এলো, চকিত দৃষ্টিতে চারদিকে চেয়ে বললে, “শুমুন, আমার উপায়—এই কথা ক’টা মনে রাখুন। মনে ধদি রাখতে পারেন, তবে বাচাতে পারবো।—আমার নাম বাম, আমি এ-বাড়ীর মেজবোঁ, আমার বাপের বাড়ীর গ্রামের নাম কুস্কমপুর, জেলা বৰ্দ্ধমান, থানা রায়না-আমার বাপের নাম হরিদাস মজুমদার, জ্যাঠামশায়ের নাম পাঁচকড়ি মজুমদার, আমরা দুই বোন, আমার দিদির নাম ক্ষাস্তমণি, বিয়ে হয়েচে সামন্তপুর-তেওটা, বৰ্দ্ধমান জেলা। শ্বশুরের নাম ফুল্লভ দাস-সবাই জাতে বারুই। আমার বাবা, জ্যাঠামশায় সব বেঁচে আছেন, কিন্তু মা নেই—“ আমার তখন বুদ্ধি লোপ পেতে বসেচে—যা বলে মেয়েটি তাই করে যাই। এতে কি হবে ? বোঁটি কিন্তু এক একবার বাড়ীর মধ্যে যায়, আবার অল্প 'মিনিটের জন্যে ফিরে এসে আমায় তালিম দিয়ে যায়—“মনে আছে তো ? জ্যাঠামশায়ের নাম কি ?”