পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তালনবমী ২৬১

  • কেন পাবে না ? এমন বয়েস এখনো হয়নি যে এই সন্ধ্যে-বেলাতেই চোখে ঠাওর হবে না।”

একবার গঙ্গাধর জিজ্ঞেস করলে, “তোমার ডেরা কোথায়, খাসাহেব ?” লোকটা চকিতে পেছনে ফিরে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে বললে, “কেন, সে তোমার কি দরকার । পুলিসে ধরিয়ে দেবে ভেবে থাকো যদি, তবে ভালো হবে না জেনে । মাল দেবে, তুমি টাকা দেবে—মাল নিয়ে চলে যাবে,--আমার বাসার খোজে তোমার কি কাজ ?” লোকটার চোখের চাউনি অদ্ভুত । গঙ্গাধর অস্বস্তি বোধ করলে ; খুব ভালো দেখা যায় না, কিন্তু ওর দুই চোখে যেন ইস্পাতের ছুরি ঝলসে উঠলো। না, তার সঙ্গে টাকা রয়েচে— এ-অবস্থায় একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত অজ্ঞাতকুলশীল লোকের সঙ্গে একা এই সন্ধোবেলাতে সে এতদূর এসে পড়েচে ? লোভে মানুষের জ্ঞান থাকে না—তার ভেবে দেখা উচিত ছিল। কিন্তু যখন এসেইচে, তখন আর চারা নেই। বিশেষত:, সে যে ভয় পেয়েচে এটা না-দেখানোই ভালো। দেখালে বিপদের সম্ভাবনা বাড়বে বই কমবে না। ছুরি বার করে বসলে তখন আর উপায় থাকবে না। অনেক দূর গিয়ে মাঠের মধ্যে একটা গুদামঘর। একটা গাছের গুড়ি পড়ে আছে, গুদামঘরের দরজা থেকে একটু দূরে । তার ওপর গঙ্গাধরকে বসতে বলে লোকটা কোথায় চলে গেল। গঙ্গাধর বসে চারিধারে চেয়ে দেখলে গুদামঘরের আশেপাশে সৰ্ব্বত্র আগাছার অনুচ্চ জঙ্গল, নিকটে কোথাও লোকজনের সাড়াশব্দ নেই। অন্ধকার হ’লেও মাঠের মধ্যে বলে অন্ধকার তত ঘন নয় ; সেই পাতলা অন্ধকারে চেয়ে দেখে গঙ্গাধরের মনে হ’ল গুদামঘরটা পুরোনো এবং যেন অনেককাল অব্যবহার্য হয়ে পড়ে আছে । বাশের বেড়া খসে পড়েচে জায়গায় জায়গায়, চালের খোলা উন্ডে গিয়েচে মাঝে মাঝে, সামনের দোরটা উই-ধরা, ভেঙে পড়তে চাইচে যেন। ••• গঙ্গাধরের কেমন একটা ভয় হ’ল । কেন সে এখানে এলে এই সন্ধ্যায় ? এরকম জায়গায় এক মামুষে আসে, বিশেষ করে এতগুলো টাকা সঙ্গে করে ? সে আসতো না কখনই, সে কলকাতায় আজ নতুন নয়, তার ওপরে বুনো ব্যবসাদার, বাঙাল দেশ থেকে নতুন আসে নি। ওই লোকটির কথার স্বরে কি জাদু আছে, গঙ্গাধরকে যেন টেনে এনেচে, সাধ্য ছিল না যে সে ছাড়ায় ৷ একথা এখন তার মনে হ’ল । হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে খাসাহেবের মূৰ্ত্তি দেখা গেল । লোকটার যাওয়া-আসা এমন নিঃশব ও এমন অদ্ভুত ধরনের, যেন মনে হয় অন্ধকারে ওর চেহারা মিলিয়ে গিয়েছিল, আবার ফুটে বেঙ্কলো। কোথাও যে চলে গিয়েছিল এমন মনে হয় না। পাকা আর বুনো খেলোয়াড় আর কি ! খাসাহেব দোর খুলে গুদামঘরে ঢুকলে । গঙ্গাধরকেও যখন পেছনে আসতে বললে তখন ভয়ে গঙ্গাধরের হাত-পা ঝিমঝিম করচে, বুক টিপচিপ করচে। এই অন্ধকার গুদাম