পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক సిd রাজপুতের পরামর্শ করিয়া কি ঠিক করিল জানি না, একদল আগাইরা আসিয়া বলিল— হুজুর, আমরা ওপারে যাব। বলিলাম, কেন ? —আমাদের কি ওপারে জমি নেই ? —পুলিসের সামনে সে কথা বোলে। পুলিস তো এসে পড়ল। আমি তোমাদের এপারে আসতে দিতে পারিনে । —কাছারিতে একরাশ টাকা সেলামী দিয়ে জমি বন্দোবস্ত নিয়েছি কি ফসল লোকসান করবার জন্তে ? এ আপনার অন্যার জুলুম। —সে কথাও পুলিসের সামনে বোলো । —আমাদের ওপারে যেতে দেবেন না ? —না, পুলিস আসবার আগে নয়। আমার মহলে আমি দাঙ্গ হতে দেবে না। ইতিমধ্যে কাছারির আরও লোকজন আসিয়া পড়িল । ইহারা আসিয়া রব উঠাইয়া দিল পুলিস আসিতেছে। ছটু সিং-এর দল ক্রমশ দু-একজন করিয়া সরিয়া পড়িতে লাগিল। তখনকার মত দাঙ্গ বন্ধ হইল বটে, কিন্তু মারপিট, পুলিস-হাঙ্গীমা, খুন-জখমের সেই যে স্বত্রপাত হইল, দিন দিন তাহ বাড়িয়া চলিতে লাগিল বই কমিল না । আমি দেখিলাম ছটু সিং-এর মত দুর্দান্ত রাজপুতকে একসঙ্গে অতটা জমি বিলি করিবার ফলেই যত গোলমালের স্বষ্টি। ছটু সিংকে একদিন ডাকাইলাম। সে বলিল, এসবের বিন্দুবিসর্গ সে জানে না। সে অধিকাংশ সময় ছাপরায় থাকে। তার লোকেরা কি করে না-করে তার জন্ত সে কি করিয়া দায়ী । বুঝিলাম লোকটা পাক ঘু। সোজা কথায় এখানে কাজ হইবার সম্ভাবনা নাই। ইহাকে জবা করিতে হইলে অন্ত পথ দেখিতে হুইবে । সেই হইতে আমি গাঙ্গেণত প্রজা ভিন্ন অন্ত কোন লোককে জমি দেওয়া একেবারে বন্ধ করিয়া দিলাম। কিন্তু যে-ভুল আগেই হইয়া গিয়াছে, তাহার কোন প্রতিকার আর হইল না। নাঢ় বইহারের শান্তি চিরদিনের জন্ত ঘুচিয়া গেল। 6: আমাদের বারো মাইল দীর্ঘ জংলী-মহালের উত্তর অংশে প্রায় পাঁচ-ছশ একর জমিতে প্রজা বসিয়া গিয়াছে। পৌষ মাসের শেষে একদিন সেদিকে যাইবার দরকার হইয়াছিল-গিয়া দেখি এরা এ অঞ্চলের চেহারা বদলাইয়া দিয়াছে। ফুলকিয়ার জঙ্গল হইতে হঠাৎ বাহির হইয়া চোখে পড়িল সামনে দিগন্তবিস্তীর্ণফুল-ফোটা সর্ধেক্ষেত—যতদূর চোখ যায়, ডাইনে, বায়ে, সামনে, একটানা হলদে ফুল-তোলা একখানা