পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>&e বিভূতি-রচনাবলী আসলে ইহা একটি বড় প্রাকৃতিক গুহা—প্রাচীন কালে পাহাড়ের উপর দিকের মুখওয়ালা এ গুহার আশ্রয় লইলে শত্রুর আক্রমণ হইতে সহজে আত্মরক্ষা করা যাইত । রাজা বলিলেন—এর আর একটা গুপ্ত মুখ আছে—সে কাউকে বলা নিয়ম নয়। সে কেবল আমার বংশের লোক ছাড়া কেউ জানে না । যদিও এখন এখানে কেউ বাস করে না, তবুও এই নিয়ম চলে আসছে বংশে । গুহাটা হইতে বাহির হইয়া ধড়ে প্রাণ আসিল । তার পর আরও খানিকটা উঠিয়া এক জায়গায় প্রায় এক বিঘা জমি জুড়িয়া বড় বড় সরু মোট ঝুরি নামাইয়া, পাহাড়ের মাথার অনেকখানি ব্যাপিয়া এক বিশাল বটগাছ। রাজা দেবিরু পান্না বলিলেন–জুতো খুলে চলুন মেহেরবানি করে। বটগাছতলায় যেন চারি ধারে বড় বড বাটনা-বাটা শিলের আকারের পাথর ছড়ানো । রাজা বলিলেন—ইহাই তাহার বংশের সমাধিস্থান । এক-একখানা পাথরের তলায় একএকটা রাজবংশীয় লোকের সমাধি ! বিশাল বটতলার সমস্ত স্থান জুড়িয়া সেই রকম বড় বড় শিলাখণ্ড ছড়ানো—কোন কোন সমাধি খুবই প্রাচীন, দু'দিক হইতে ঝুরি নামিয়া যেন সেগুলিকে সাড়শির মত আটকাইয়া ধরিয়াছে, সে সব ঝুরি আবার গাছের গুড়ির মত মোট হইয়া গিয়াছে—কোন কোন শিলাখণ্ড ঝুরির তলায় একেবারে অদৃগু হইয়া গিয়াছে। ইহা হইতে সেগুলির প্রাচীনত্ব অনুমান করা যায়। রাজা দোবরু বলিলেন—এই বটগাছ আগে এখানে ছিল না। অন্য অন্ত গাছের বন ছিল । একটি ছোট বট চারা ক্রমে বেড়ে অন্ত অন্য গাছ মেরে ফেলে দিয়েছে। এই বটগাছট এত প্রাচীন যে, এর আসল গুড়ি নেই। ঝুরি নেমে যে গুড়ি হয়েছে, তারাই এখন রয়েছে। গুড়ি কেটে উপরে ফেললে দেখবেন ওর তলায় কত পাথর চাপা পড়ে আছে। এইবার বুঝুন কত প্রাচীন সমাধিস্থান এটা । সত্যই বটগাছতলায় দাড়াইয়া আমার মনে এমন একটা ভাব হইল, যাহা এতক্ষণ কোথাও হয় নাই, রাজাকে দেখিয়াও না ( রাজাকে তো মনে হইয়াছে জনৈক বৃদ্ধ সাওতাল কুলীর মত ), রাজকন্তকে দেখিয়াও নয় (একজন স্বাস্থ্যবতী হে কিংবা মুণ্ড তরুণীর সহিত রাজকন্যার কোন প্রভেদ দেখি নাই ), রাজপ্রাসাদ দেখিয়া তো নয়ই ( সেটাকে একটা সাপথোপের ও ভূতের আডিডা বলিয়া মনে হইয়াছে )। কিন্তু পাহাডের উপরে এই সুবিশাল, প্রাচীন বটতরুতলে কতকালের এই সমাধিস্থল আমার মনে এক অনম্নভূত, অপরূপ অনুভূতি জাগাইল । স্থানটির গাম্ভীৰ্য্য, রহস্য ও প্রাচীনত্বের ভাব অবর্ণনীয়। তখন বেলা প্রায় হেলিয়া পড়িয়াছে, হলদে রোদ পত্ররাশির গায়ে, ডাল ও ঝুরির অরণ্যে ধনঝরির অন্ত চূড়ায়, দূর বনের মাথায় । অপরাহ্লের সেই ঘনায়মান ছায় এই সুপ্রাচীন রাজ সমাধিকে যেন আরও গম্ভীর, রহস্যময় সৌন্দৰ্য্য দান করিল। z মিশরের প্রাচীন সম্রাটের সমাধিস্থল থিবস নগরের অদূরবর্তী ভ্যালি অব দি কিংস আজ