পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দু-হোটেল ዓ¢ —আচ্ছ, আপনাকে যদি টাকা ধার দিই ? আপনাকে বলি শুকুন খুড়োমশায় । আমার মার কাছ থেকে কিছু টাকা এনেছিলাম। এখানে রাখবার জো নেই। একটা কথা বলবে17 এদিক ওদিক চাহিয়া স্বর নীচু করিয়া বলিল—ননদ আর জা ভাল লোক নয়। এখুনি যদি টের পায় নিয়ে নেবে । আমি আপনাকে টাকা ধার দিচ্ছি, আপনি স্বদ দেবেন কত করে বলুন ? এই কুসীদ-লোভী সরলা মেয়েটির প্রতি হাজারির প্রৌঢ় মন করুণায় ও মমতায় গলিয়া গেল। সে আরও খানিক মজা দেখিতে চাহিল । —এমনি টাকা দেবে মা ? অামায় বিশ্বাস কি ? —তা বিশ্বাস না করলে কি এ কারবার চলে ? আর আপনি তো চেনা লোক। আপনার গী চিনি, বাড়ী চিনি । —চিনলেই হোল ? একটা লেখাপড়া করে নেবে না ? কত টাকা দিতে চাও? —আমার কাছে আছে আশি টাকা। সবই দিতে পারি আপনি যদি নেন। স্বন্ধ কত দেবেন ? —কত করে চাও ? —আপনি যা দেবেন। টাকায় দুপয়সা করে রেটু, আপনি এক পয়সা দেবেন, কেমন তো ? আপনার পায়ে পডি খুড়োমশায়, টাকাগুলো আলাদা আমার তোরঙ্গতে তোলা আছে। কেউ জানে না। আপনাকে এনে দিই, টাকাগুলো খাটিয়ে দিন আমায়। কাকে বিশ্বাস করে দেবো, কে নিয়ে আর দেবে না । —কই, লেখাপড়ার কথা বল্পে না তো ? —আমি লেখাপড়া জানি নে—কি লেখাপড়া করে নেবো। আপনি চান একটা কিছু লিখে দিয়ে যান। কিন্তু তাতে লোক-জানাজানি হবে। সে কাজের দরকার নেই। আপনি নিয়ে ধান। আমি দিচ্চি মিটে গেল। এর আর লেখাপড়া কি ? ইতিমধ্যে রান্নাবান্না শেষ হইয়া গেল। বউট একঘটি দুধ আনিয়া বলিল—এই উকুনট। পেড়ে দ্বধটুকু জাল দিয়ে খেতে বহন-বেলা কি কম হয়েচে ? খাওয়া-দাওয়া মিটিয়া গেল। হাজারির কথা মিথ্যা নয়—গোয়ালাবাড়ীর সকলে একবাক্যে বলিল, এরকম রান্না খাওয়া তো দূরের কথা, সামান্য জিনিস ৰে খাইতে এমনধারা হয় তাহা শোনেও নাই । 喂 বিকালে বিশ্রাম করিয়া উঠিয়া হাজারি যাইবার জন্য তৈরী হইল। তাহার हेक्का झ्ञि আর একবার বউটর সঙ্গে দেখা করে। পল্লীগ্রামে মেয়েদের মধ্যে কড়াকড়ি পর্দা নাই সে জানে, বিশেষতঃ ব্রাহ্মণ কায়স্থ ভিন্ন অন্ত জাতির মেয়েদের মধ্যে। মেয়েটিকে তাহার ভাল লাগিয়াছিল উহার সরলতার জন্য এবং বোধ হয় টাকাকড়ি সম্বন্ধে কথাটা আর একবার বলিতে তাহার ইচ্ছা হইতেছিল, সে ইতিমধ্যে একটা মতলব মাথায় জানিয়া ফেলিয়াছে।