পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী واه اج নিতান্ত ভদ্রতাবিরুদ্ধ হয় বলিয়া, বিশেষত যখন বিপিনের সঙ্গে তাহার খুব বেশি ঘনিষ্ঠতা নাই, সেকথা বলিতে পারিল না। শুধু বিস্ময়ের দৃষ্টিতে বিপিনের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। জয়কৃষ্ণ বলিল, বিশ্বেশ্বরবাবু, আপনার জীবনে এ রকম কখনো কিছু নিশ্চয় হয়েছে, বলুন না শুনি । g 蠱 বিশ্বেশ্বর নিতাস্ত হতাশ ও দুঃখিত ভাবে খানিকট আপনমনেই বলিল, আমাদের এ রকম কখনও কেউ চিঠি লেখে নি, চিঠি লেখা তো দূরের কথা, কখনও কোন মেয়ে কিছু বলেও নি, সাহস ক'রে কাউকে কখনও কিছু বলতেও পারি নি মাস্টারবাৰু, সত্যি বলছি, এই এত বয়স হ’ল । —বিয়েও তো করলেন না । —বিয়ে কি ক’রে করব মাস্টারবাবু, দেখতেই পাচ্ছেন সব। পাচশ টাকা মাইনে লিখি স্কুলের খাতায়, পাই পনরো টাকা। ন মাতা ন পিতা, মামার বাড়ী মামুষ হয়েছি দু:খে-কষ্টে । তেমন লেখাপড়াও শিখিনি । মামাদের দোরে তাদের চাকরগিরি করে, হাটবাজার ক’রে অতিকষ্টে ছাত্রবৃত্তি পাস করি । জয়কৃষ্ণ বলিল, fবয়ে করলে আপনার লোক পেতেন বিশ্বেশ্বরবাবু। এর পরে দেখবেন, একজন মহিষ অভাবে কি কষ্ট হয় ! বিশ্বেশ্বর চক্রবত্তী বলিল, এর পর কেন, এখনই হয় । সত্যি বলছি মাস্টারবাবু, একটা ভাল কথা কখনও কেউ বলে নি, বড় দুঃখে এ কথা বলছি, কিছু মনে করবেন না, কারও মুখে একটা ভালবাসার কথা, এই উনি যেমন বলছেন, এ তো কখনও শুনিই নি, কাকে বলে জানিও না। তাই এক এক সময় ভাবি, জীবনটা বৃথায় গেল মাস্টারবাবু, কিছুই পেলাম না । বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তী এমন হতাশ মুরে এ কথা বলিল যে, সে ধে অকপটে সত্য কথা বলিতেছে, এ বিষয়ে বিপিনের কিছুমাত্র সন্দেহ হইল না । সে যে কিছুদিন আগেও ভাবিত, তাহার তুল্য অমুখী মানুষ দুনিয়ায় কেহ নাই, ইহার বৃত্তান্ত শুনিয়া বিপিনের সে ধারণ দূর হইল । এই ভাগ্যহত দরিদ্র স্কুল-মাস্টারের উপর তাহার যেন একটা অহেতুক ভালবাসা জন্মিল। হঠাৎ মনে হইল, জয়কৃষ্ণ তাহার এতদিনের বন্ধু বটে, কিন্তু জয়কৃষ্ণের চেয়েও এই অৰ্দ্ধপরিচিত বিশ্বেশ্বর চক্রবত্তী যেন তাহার অনেক আপন । ইহা দরিদ্রের প্রতি দরিদ্রের সমবেদন নয়, দরিত্রের প্রতি ধনীর করুণ। কারণ বিপিন এখন ধনী। আজই এইমাত্র বিপিন ভাল করিয়া বুঝিয়াছে ধে, সে কত বড় ধনী ।