পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૮૨ বিভূতি-রচনাবলী ভেতর থেকে। সেখান থেকে বেরিয়েছি রাত দশটার পরে। নতুন গরু, চলতে পারে না পথে, এখন রাত তো প্রায়— আঃ, কি কষ্টই গিয়েছে সারারাত ! বাড়ীর ভিতর হইতে তখনই ফিরিয়া অনাদিবাৰু বিপিনকে কাগজপত্র বুঝাইয়া দিলেন। বলিলেন, আমি গিয়ে শুয়ে পড়ি, তুমিও শোও। এখনও ঘণ্টা দুই রাত আছে। ভোরে উঠে চলে ষেও। যদি উকিলবাবু ছেড়ে দেন, তবে কালই ওখানে খাওয়াদাওয়া ক’রে বিকেল নাগাৎ এখানে চ'লে এস । কাল আবার আমার মেয়েকে নিতে জামাই আসছেন কলকাতা থেকে, পার তো কিছু মিষ্টি এন সাধুচরণ ময়রার দোকান থেকে। এই একটা টাকা নিয়ে যাও । খুব ভোরে উঠিয়া বিপিন রাণাঘাট রওনা হইল। যাইবার সময় সারাপথ দেখিল, খুব ভোরে উঠিয়া চাষার জমি নিড়াইতেছে। এবার বৈশাখের প্রথমে বৃষ্টি হইয়া ফসল বুনিবার স্ববিধা করিয়া দিয়াছিল, এখন বৃষ্টি আদৌ নাই, জমিতে জমিতে নিড়ানি দেওয়া চলিতেছে। হয়তো এবার জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি বর্ষা নামিবে—এই ভয়ে চাষার শীঘ্র শীঘ্ৰ ছাটার কাজ শেষ করিতে চায়। সারাপথ দুইধারে মাঠে ধান-পাটের ক্ষেতে চাষার জমি নিড়াইতেছে। ভোরের অতি সুন্দর মিষ্টি বাতাস। মাঠে ও পথের ধারে ছোট বড় গাছে সোদালি ফুলের ঝাড় ঝুলিতেছে, বিশেষ করিয়া কানসোনার মাঠে। রেলের ফটক পার হইয়া আবাদ তত নাই, ফাক মাঠের মধ্যে চারিধারে শুধুই সোদালি ফুলের গাছ। কলাধরপুরের বিশ্বাসদের বাড়ীর চণ্ডীমণ্ডপে বিপিন একবার তামাক খাইবার জন্য বসিল । প্রতিবার রাণাঘাট হইতে ধাতায়াতের পথে এইটা তাহার বিশ্রামের স্থান। বিশ্বাসদের বাড়ীর সকলেই বিপিনকে চেনে । বিশ্বাসদের বড়কর্তা রাম বিশ্বাস চণ্ডীমগুপের সামনে পাটের দড়ি পাকাইতে ব্যস্ত ছিলেন। বিপিনকে দেখিয়া বলিলেন, এই ষে আম্বন চাটুজে মশায়, প্ৰণাম হই । আজ যে বডড সকালে রাণাঘাট চলেছেন, মোকদ্দমা আছে না কি ? উঠে বস্থন ভাল হয়ে। একটু চা ক’রে দিক ? —ন না, চায়ের দরকার নেই। একটু তামাক খাই বরং । —আরে, তামাক তো খাবেনই, চা একটু থান। অত সকালে তো চ খেয়ে বেরোননি ? এখন সাতটা বাজে, আমিও তো চা খাব । বস্কন, চার ক্রোশ রাস্তা হেঁটেছেন এর মধ্যে, কষ্ট কম হয়েছে ? একটু জিরোন । মানীর সঙ্গে ফিরিয়া আজ দেখা হইবে কি ? অার দেখা হওয়া সম্ভবও নয়। দেখা হইলেও কথাবাৰ্ত্তা তেমন ভাবে হইবে না। জামাইবাবু আসিবেন, কৰ্ত্তা বাড়ী রহিয়াছেন। তবুও একবার চেষ্টা করিয়া দেখিতে হইবে। বিশ্বাস মহাশয় চা ও মুড়ি আনিয়া দিলেন। বিপিন থাইতে খাইতে বলিল, এবার পাট ক’বিঘে বুনলেন বিশ্বেস মশায় ? —ত ধরুন, প্রায় বারো-চোঙ্গ বিধে হবে। বুনলে কি হবে, খরচ পোষায় না, দশ টাকা করে দুটো কিষাণ, তা বাদে জন-মজর তো আছেই। পাটের দর তো উঠল না। ওই