পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার ९ve দত্ত মহাশয় বলিলেন, এইটি আমার মেয়ে। শাস্তি, ডাক্তারবাবুকে প্রণাম কর মা। তরুণী লুচির চুপড়ি নামাইয়া রাখিয়া বিপিনের পায়ের ধূলা লইয়া প্ৰণাম করিল। তারপর সকলের পাতে লুচি দিয়া চলিয়া গেল। বিপিনের হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল আর এক দিনের কথা। মানীদের বাড়ী, সেও এই রকম জামাই আসিয়াছিল, রান্নাঘরে এই রকম জামাইবাবু, অনাদিবাবু ও সে খাইতে বসিয়াছিল। সেদিন আড়ালে ছিল মানী—দেড় বৎসর আগের কথা । আর কি তাহার সঙ্গে দেখা হইবে ? সম্ভব নয়। দেখাসাক্ষাতের স্থত্র ছিড়িয়া গিয়াছে। আর সে সম্ভাবনা নাই। ভাবিতেই বিপিনের বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়া উঠিল । লুচির ভ্যাল গলায় আটকাইয়৷ গেল, কান্না ঠেলিয়া আসে । মন হু হু করিয়া উঠিল । ইহারা কে ? ওই যে শুীমা মেয়েটি আধ ঘোমটা দিয়া পরিবেশন করিতেছে, কে ও ? বিপিন ইহাদের চেনে না। অতি সুপরিচিত পরিবেশের মধ্যে ইহারা সবাই অপরিচিত। কোন দিক দিয়াই বিপিনের সঙ্গে ইহাদের কোন যোগাযোগ নাই । শাস্তি আসিয়া পায়েসের বাটি প্রত্যেকের পাতের কাছে রাখিয়া সেই ঘরের মধ্যেই দাড়াইয়া রহিল। দত্ত মহাশয় বিপিনের ডাক্তারির প্রশংসা করিতেছিলেন, শাস্তি একমনে যেন তাহাই শুনিতেছিল । বিপিন একবার মুখ তুলিয়া চাহিতেই শাস্তির সঙ্গে চোখাচোথি হইয়া গেল। শাস্তি তাহারই দিকে চাহিয়া ছিল এতক্ষণ নাকি ? বিপিন কেমন অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিল । দত্ত মহাশয় তাহার মেয়েকে অকুযোগ করিতে লাগিলেন, তিনি লুচি খাইতে ভালবাসেন না, তবে কেন তাহাকে লুচি দেওয়া হইয়াছে। দত্ত মহাশয়ের আহারাদির বিশেষত্ব আছে, পূৰ্ব্বে অবস্থা ভাল থাকার দরুনই হউক বা ষে জন্যই হউক, তাহার খাওয়া-দাওয়া একটু শৌর্থীন ধরনের । তাহার জমিতে সাধারণতঃ মোট নাগরা ধান হয়, কিন্তু সে ধানের চাল তিনি থাইতে পারেন ন। বলিয়া সেই ধানের বদলে উৎকৃষ্ট সরু চামরমণি ধান সংগ্ৰহ করিয়া আনেন সোনাতনপুরের বিশ্বাসদের গোলাবাড়ী হইতে। বারমাস তিনি এই চামরমণি ধানের চাল ছাড়। খান না। বাড়ীর আর কেহ নয়, শুধু তিনি। অন্য সকলের জন্য ক্ষেতের মোট চালের ব্যবস্থা। তবে অথিতিসজ্জন আসিলে অবহু অন্য কথা । বড় বগী থালায় চূড়ার আকারে ভাত বাড়িয়া চূড়ার মাথায় ক্ষুত্র কাসার বাটিতে গাওয়৷ ধি দিতে হইবে । ঢাকনিওয়াল। ঝকঝকে কাসার গ্লাসে তাহাকে জল দিতে হইবে। খুব বড় কাঠাল কাঠের সেকেলে পিড়ি পাতিয়, থালায় স্বগোছালো করিয়া ভাত সাজইয়া না দিলে তাহার খাওয়া হয় না । অনেকদিন পরে মেয়ে আসিয়াছে, দত্ত মহাশয় একটু বেশী সেবা পাইতেছেন। পুত্রবধূরা শ্বশুরের সেব। যথেষ্ট করিলেও বিপত্নীক দত্ত মহাশয়ের তাহ মনে ধরে না । মেয়ে কেন ভাত সাজাইয়া না দিয়া লুচি খাওয়াইতেছে, ইহাই হইল দত্ত মহাশয়ের অঙ্গুযোগের কারণ,