পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার \లిపి ইতিমধ্যে মতির মা কি কাজে একটু বাড়ীর মধ্যে ঢুকিতেই বিপিন জিজ্ঞাসা করিল—আচ্ছ। শাস্তি—মতির মা বলে ডাকচে, ওর মতি বলে মেয়ে ছিল ? শান্তি বিস্মিত হইয়া বলিল-আপনি ওকে চেনেন ? —ও কি জাত ? – বাগদী কিংবা দুলে। আপনি ওর কথা জানলেন কি করে ? -- বলচি । ওর বাড়ী কি ভাসানপোতা ছিল ? শান্তি আরও অবাক হইয়া বলিল — ভাসানপোতা ওর শ্বশুরবাড়ী । এ গায়ে ওর বাপের বাড়ী । ওর স্বামী ওকে নেয় না অনেকদিন থেকে । ওর মেয়ে মতি ওর বাপের কাছেই ছিল, তার বিয়ে হয়েছে এই দিকে যেন কোথায় । আমি তাকে কখনো দেখিনি, সে এখানে আসে না । —আচ্ছ, তুমি জানো মতির সঙ্গে ওর মার দেখা হয়েছিল কতদিন আগে ? —না। কেন বলুন তো—এত কথা জিজ্ঞেস করচেন কেন ? —ওকে কথাটা জিজ্ঞেস করবে ? নয়তে থাকৃ। আজ জিগ্যেস কোরো না-পরে বলবো এখন ! ইতিমধ্যে মতির মা আসিয়া পড়াতে বিপিন কথা বন্ধ করিল। প্রৌঢ়া আবার টেকিতে পাড় দিতে আরম্ভ করিল। বিপিন ভাবিল, হয়তো এ জানে না তাহার মেয়ে পিতৃগৃহ ত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছিল এবং তাহার সম্প্রতি মৃত্যু হইয়াছে। আজ কৃষ্ণ ৱিতীয়, ঠিক এই পূর্ণিমার আগের পূর্ণিমার রাত্রে। বল্লভপুরের বিলের ধারের সে ফুটফুটে জ্যোৎস্ন রাত বিপিন ভুলে নাই । সে রাতটিতে বাগদীর মেয়ে মতি তাহার মনে একটা খুব বড় দাগ রাখিয়া গিয়াছে। অন্য এক জগতের সহিত পরিচয় করাইয়া গিয়াছে। অভাগিনী বৃদ্ধা জানেও না তাহার মেয়ের কি ঘটিয়াছে। পরদিন শান্তি যখন চা দিতে আসিল, তখন নির্জনে পাইয়া বিপিন মতির কাহিনী শাস্তিকে শুনাইয়া দিল। শান্তি যেমন বিস্থিত হইল, তেমনি দুঃখিত হইল। বলিল—আমার মনে হয় মেয়ে যে ঘর থেকে চলে গিয়েছে একথা ও জানে, কারে কাছে প্রকাশ করে না সেকথা—তবে সে যে মরে গিয়েচে একথা জানে না । জানবার কথাও নয়, বল্লভপুরে ওর। লুকিয়ে এসে ঘর বেঁধে থাকতো, কাউকে পরিচয় তো দেয়নি—কি করে জানবে কোথাকার কার মেয়ে ? ভাসানপোতা থেকে জেয়ালা-বল্লভপুর কতদূর ? —তা আট ন’ ক্রোশ খুব হবে । —ত হোলে ও কিছুই জানে না, মেয়ে ঘর ছেড়ে বের হয়ে গিয়েচে, একথাও শোনে নি। এতদূর থেকে কে খবর দেবে! ওকে আর কোনো কথা জিগ্যেস করার দরকার নেই।