পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী o6.6% কুলীর মাথায় মোট চাপিয়ে একটি ভদ্রলোক ইন্টিশান থেকে বেরিয়ে এলেন । বেশ স্বপুরুষ চেহারা, বয়স বছর ত্রিশ পয়ত্রিশ, খুব ফর্স, চোখে সোনার চশমা। গ্রামের মধ্যে কোথাও তাকে দেখেছি বলে মনে হয় না। অবাক হয়ে তার পানে অনিমেষ নয়নে তাকিয়ে রইলুম। আশ্চৰ্য্য ! তিনি আমার কাছেই এগিয়ে এলেন, এমন কি তিনি আমাকেই প্রথমে সম্বোধন করলেন, শোন খোকা । আমার চিত্ত পরম শ্রদ্ধায় ভয়ে গেল। বিনীত কণ্ঠে বললুম, আঙ্গে ! তিনি বললেন, তুমি বুঝি এখানে থাক ? বললুম, ই । তিনি বললেন, বিষ্ণুপুর হাইস্কুল কোথায় বলতে পার? বললুম, এই তো আমাদের স্কুল, চলুন না নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বললেন, ও, তুমি বুঝি ওই স্কুলে পড় ? আমি গৰ্ব্ব অনুভব করলুম। তিনি বললেন, কোন ক্লাসে পড় ? বললুম, ক্লাস সেভেনে । তিনি বললেন, বেশ বেশ, তোমার নাম ? বললুম, শ্ৰীমান নিৰ্ম্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কথায় কথায় আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি, গ্রামের মধ্যেই প্রায় । একটা ষোড বঁাকতেই স্কুল দেখা গেল। বললুম, ঐ দেখুন, আমাদের ইস্কুল.....ঐ সাদা রঙের দোতলা বাড়ীটা । আপনি কোথায় যাবেন ? ইস্কুল তো এখন বন্ধ । তিনি বললেন, আমি যাব আশু চৌধুরীর বাড়ী। আমি বললুম, ও; ! আপনিই বুঝি আমাদের নতুন হেডমাস্টার ? তিনি স্মিতমুখে বললেন, ই, কেন বল তো ? আশ্চৰ্য্য! আমি এতক্ষণ কার সঙ্গে কথা বলেছি? প্রশস্তিকুমার মুখোপাধ্যায় এম. এ. আমাদের নবনিযুক্ত প্রধান শিক্ষক । আমি নিবিড় শ্রদ্ধায় তার পদধূলি মাথায় নিলুম। তিনি আমার পিঠ চাপড়ে বললেন, থাকু থাক্ থাকৃ। আজও আমি সেদিনের কথা ভুলতে পারি নি। তার সেই সৌম্য মূৰ্ত্তি, মধুর ভাষা আমার স্মৃতিপটে দুরপ্রনেয় রেখাপাত করে গেছে । স্কুলে রীতিমত হৈ চৈ পড়ে গেল। আগেকার বুডো হেড মাস্টারের পরিবর্তে প্রশাস্তবাবুকে পেয়ে অনেকে স্বস্তি বোধ করল । উচু ক্লাসের বড় বড ছেলেরা তো হেগেই ফু করে উড়িয়ে দিল । বলল, আরে, ছ্য। ও আবার হেডমাস্টারী করবে ! ডিসিপ্লিন কাকে বলে তাই হয়তো জানে না। অতটুকু হেডমাস্টারকে কেই বা মানবে ? কি বলিস্ বঙ্কেশ্বর ? বঙ্কেশ্বর তুড়ি দিয়ে বলল, আরে অমন অবনীবাবুকে ঘাল করে দিলাম তার আবার প্রশাস্ত মুখুজে এম. এ. ! মাত্তর ছুদিন, তারপর দেখে নিস, বাছাধনকে বুঝিয়ে দেব আমরা হচ্ছি ইস্কুলের লিডার। নে নে ভোলানাথ, একটা গান ধর । 象