পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল 9יפול এমন ধরনের কথা হাজারি কখনও পদ্মঝিয়ের মুখে শোনে নাই। সেই পদবি আজ কি কথা বলিতেছে তাহাকে ? হাজারি গলিয়া গেল। সে ভুলিয়া গেল ষে সে একজন বড় হোটেলের মালিক –পদ্মদিদি তাহার মনিবের দরের লোক, তাহার মুখের একথা যেন হাজারির জীবনের সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার। এরই আশায় যেন সে এতদিন রাণাঘাটের রেলবাজারে এত কষ্ট করিয়াছে । অন্ত লোকে হাজার ভাল বলুক, পদ্মদিদির ভাল বলা তাদের চেয়ে অনেক উচু, অনেক বেশী মূল্যবান । কিন্তু পদ্ম যাহা বলিতেছে, তাহা যে হয় না একথা সে পদ্মকে কি করিয়া বুঝাইবে । যখন সে গোপালনগরের চাকুরি ছাড়িয়া পুনরায় চকত্তি মশায়ের হোটেলে চাকুরি লইয়াছিল— তখনও উহারা যদি তাহাকে না তাড়াইয়া দিত, তবে তো নিজস্ব হোটেল খুলিবার কল্পনাও তাহার মনে আসিত না। উহাদের হোটেলে পুনরায় চাকুরি পাইয়া সে মহা সৌভাগ্যবান মনে করিয়াছিল নিজেকে—কেন তাহাকে উহারা তাড়াইল । এখন আর হয় না। এখন সে নিজের মালিক নয়, কুস্কমের টাকা ও অতসীমা’র টাকা হোটেলে খাটিতেছে, তাহার উন্নতি-অবনতির সঙ্গে অনেকগুলি প্রাণীর উন্নতি-অবনতি জড়ানো। নিজের খেয়ালখুশিতে যা-তা করা এখন আর চলিবে না। টেপির ভবিষ্যৎ দেখিতে হইবে—টেপি আর নরেন। অনেক দূর আগাইয়া আসিয়াছে—আর এখন পিছানো চলে না। হাজারি পদ্মঝিয়ের মুখের দিকে দুঃখ ও সহাহভূতির দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিল— —আমার ইচ্ছে করে পদ্মদিদি। কিন্তু এখন যাওয়া হয় কি ক’রে তুমিই বল । পদ্ম যে কথাটা না বোঝে তা নয়, সে নিতান্ত মরীয়া হইয়াই কথাটা বলিয়া ফেলিয়াছিল। হাজারির কথার সে কোনো জবাব না দিয়া ঘরের মধ্যে ঢুকিল এবং কিছুক্ষণ পরে একটা কাপড়-জড়ানো ছোট্ট পুটুলি আনিয়া হাজারির সামনে রাখিয়া বলিল—পড়তে জান তো, পড়ে দেখ না ? হাজারি পড়িতে জানে না তাহ নয়, তবে ও কাজে সে খুব পারদর্শী নয়। তৰু পদ্মদিদির সম্মুখে সে কি করিয়া বলে যে সে ভাল পড়িতে পারে না! পুটুলি খুলিয়া সে দেখিল খানকয়েক কাগজ ছাড়া তার মধ্যে আর কিছু নাই। পদ্মঝি তাহাকে বিপদ হইতে উদ্ধার করিল। সে নিজেই বলিল—ক-খান হ্যাগুনোট, তা সবস্থদ্ধ সাত-শ টাকার হ্যাওনোট। কর্তাকে আমি টাকা দেই যখনই দরকার হয়েছে তখন । নিজের হাতের চুড়ি বিক্রি করি, কানের মাকড়ি বিক্রি করি—ছিল তো সব, যখন এইস্তিরি ছিলাম, দুখানা সোনাদান ছিল তো অঙ্গে । হাজারি বিন্মিত হইয়। বলিল—তুমি টাকা দিয়েছিলে পদ্মদিদি ?