পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী ৩৮৩ সেদিন বিকালে স্কুল হইতে ফিরিয়াই তাহার কাকার ছোট ছেলে চীৎকার করিয়া উঠিল, মা, গোবরা আজ ভয়ানক মার খেয়েছে । বয়সে সে গোবিদের চেয়ে তিন বছরের ছোট হওয়া সত্ত্বেও তাঁহাকে বড় বলিয়া স্বীকার করিয়া লইতে সে দ্বিধা বোধ করিত। কাকীমা হাসিয়া বলিলেন, তাতে আর আশ্চৰ্য্য কি ? দুশো বার বলেছিলুম, হতভাগাটাকে ইস্কুলে ভৰ্ত্তি করে কাজ নেই, তবু যদি এ অভাগীর কথা শুনবে । মাগী মরুক চেচিয়ে, ওনার বয়ে গেছে ! কথায় আছে না, কানে দিয়েছি তুলো আর পিঠে বেঁধেছি কুলো। ওনারও সেই দশা হয়েছে । কেন মার খেয়েছে রে সেন্ট ? সেন্ট সগৌরবে কহিল, পড়া পারে নিমা । কোন দিনও পডা পারে না। সেন্ট ও গোবিন্দ এক ক্লাসে পড়ে । কাকীমা গম্ভীরকণ্ঠে ডাকিলেন, গবাক্ষ, এদিকে আয় ! বলির পশুর ন্যায় কঁাপিতে কঁাপিতে গবাক্ষ কাকীমার সামনে আসিয়া দাড়াইল। কাকীমা তীক্ষ দৃষ্টিতে তাহার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন, পণ্ড পারিস নে কেন রে গবাক্ষ ? টাকাগুলো কি খোলামকুচি পেয়েছিস ? ইস্কুলের মাইনে, বাড়ীর মাস্টারের মাইনে, আমাদের কি তালুক-মুলুক আছে বাছা ? হুঁ, যদি বুঝতুম কিছু হচ্ছে তা হলে নয় এক কথা। তা নয়, এ শুধু ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ ! সেন্ট কহিল, পিঠে বেতের দাগ বসে গেছে মা । জামা তুলে দেখ । কাকীমা জামা তুলিয়া দেখিলেন। তারপর ধীরে ধীরে রায় প্রকাশ করিলেন, আচ্ছ, উনি আম্বন আগে বাড়ী। মকদ্দমা যেন দায়রায় সোপর্দ হইল । গোবিন্দ পড়া পারে না সত্য, কিন্তু তাহার পশ্চাতে একটি অতি সত্য নিহিত ছিল । বাড়ীতে সে পড়িবার সময় পায় না । সারাদিন কাকীমার ফাইফরমাশ খাটিতে খাটিতে তাহার নিঃশ্বাস ফেলিবার সময় থাকিত না । না বলিবার যো নাই । তাহা হইলে হয়তো বাড়ী হইতে দূর করিয়াই দিবেন তৎক্ষণাৎ । প্রায়ই তো তিনি বলেন, বিদি হয়ে যা, বিদি হয়ে যা ; আর জালাতন করিস নে আমাদের । মাগী একটা ফ্যাচাং দিয়েছে দেখ না ! সেদিন সকালবেলা সবে পড়িতে বসিয়াছে এমন সময়ে কাকীমা আসিয়া তাহাকে একটি আনি দিয়া বলিলেন, ওরে গবাক্ষ, চট করে ছপয়সার চিনি নিয়ে আয় তো। দয়া করে দুটো পয়সা ফিরিয়ে আনতে ভুলিস না যেন । তোর আবার যে ভুলো মন । গবাক্ষ তখন বাঙ্গালা দেশে কয়টি বিভাগ আছে মুখস্থ করিতে ব্যস্ত। পড়া না করিলে সতীশবাবু তাহাকে মারিয়া রসাতল করিবেন। আশ্চৰ্য্য এই সতীশবাবু! গাট মারিতে তিনি অত্যন্ত পটু। প্রথম দিন হইতে তিনি গবাক্ষকে চিনিয়া রাখিয়াছেন। প্রথমেই তিনি চোখ বুজিয়াই ডাকিয় বসেন, গোবর, এদিকে আয়। ঐ ডাক শুনিয়াই গোবিন্দর রক্ত শুকাইয়া যায়। তারপর তিনি হয়তো প্রশ্ন করিলেন, স্বল বাঙ্গল দেশের রাজধানী কি ? আর সেখানে কি কি দেখবার জিনিস আছে ?