পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ર বিভূতি-রচনাবলী কাটা খেয়ে কাজ করতে আর ইচ্ছে করে না। আমি আজ দশ বছর হোটেলে কাজ করছি, বাজার কি ক’রে করতে হয় ভাল ক’রে শিখে ফেলেছি । চক্কত্তি মশায়ের চেয়েও আমি ভাল বাজার করতে পারি। মাখমপুরের হাট থেকে ফি হাটুরা যদি তরিতরকারী কিনে আনি তবে রাণাঘাটের বাজারের চেয়ে টাকায় চার আনা ছ’আনা সস্তা পড়ে । এ ধরে কম লাভ নয় একটা হোটেলের ব্যাপারে । বাজার করবার মধ্যেই হোটেলের কাজের আদ্ধেক লাভ ৷ আমার খুব মনে জোর আছে কুষম, টাকা পয়সা হাতে যদি কখনো পড়ে, তবে হোটেল ষা চালাবো, বাজারের সেরা হোটেলে হবে, তুই দেখে নিস । কুহুম হাজারি ঠাকুরের এ দীর্ঘ বক্তৃতা অবাক হইয়া শুনিতেছিল—সে হাজারিকে বাবার মত দেখে বলিয়াই মেয়ের মত বাবার প্রতি সৰ্ব্বপ্রকার কাল্পনিক গুণ ও জ্ঞানের আরোপ করিয়া আসিতেছে। হোটেলের ব্যাপারের সে বিশেষ কিছু বুকুক না বুঝুক, বাবাঠাকুর যে বুদ্ধিমান, তাহা সে হাজারির বক্তৃতা হইতে ধারণা করিয়া লইল । কিছুক্ষণ পরে কি ভাবিয়া সে বলিল—আমার এক জোড়া রুলি ছিল, এক গাছ বিক্রী ক’রে দিয়েছি আমার ছোট ছেলের অস্বথের সময় আর বছর। আর এক গাছা আছে । বিক্রী করলে ষাট-সত্তর টাকা হবে। আপনি নেবেন বাবাঠাকুর ? ওই টাকা নিয়ে হোটেল খোলা হবে আপনার । হাজারি হাসিয়া বলিল-দূর পাগলী! বাট টাকায় হোটেল হবে কি রে ? —কত টাকা হ’লে হয় ? —অস্ততঃ দুশো টাকার কম তো নয়। তাতেও হবে না । —আচ্ছা, হিসেব ক’রে দেখুন না বাবাঠাকুর । —হিসেব ক’রে দেখব কি, হিসেব আমার মুখে মুখে। ধরে গিয়ে দুটো বড় ডেকচি, ছোট ভেক্‌চি তিনটে । থালা-বাসন এক প্রস্থ । হাতা, খুস্তি, বেড়ি, চামচে, চায়ের বাসন। বাইরে গদির ঘরের একখানা তক্তপোশ, বিছানা, তাকিয়া। বাক্স, থেরো বাধানো খাতা দ্বখানা। বালতি, লন্ঠন, চাকি, বেলুন—এই সব নানান নটখটি জিনিস কিনতেই তো দুশো টাকার ওপর বেরিয়ে যাবে। পাচদিনের বাজার খরচ হাতে ক’রে নিয়ে নামতে হবে । চাকর ঠাকুরের দু’মাসের মাইনে হাতে রেখে দিতে হয়—যদি প্রথম দু’মাস না হোলো কিছু, ঠাকুর চাকরের মাইনে আসবে কোথা থেকে ? সে-সব স্বাকৃ-গে, তা ছাড়া তোর টাকা নেবোই বা কেন ? কুহম ক্ষুব্ধ স্বরে বলিল—আমার থাকতো যদি তবে আপনি নিতেন না কেন—ব্রাহ্মণের লেবায় যদি লাগে ও-টাকা, তবে ও-টাকার ভাগ্যি বাবাঠাকুর । লে ভাগ্যি থাকলে তো হবে, আমার আত টাকা যখন নেই, তখন আর সে কথা বলছি কি ক'রে বলুন । ষা আছে, ওতে স্বদি কখনো-সখনো কোন দরকার পড়ে আপনার মেয়েকে জানাবেন । হাজারি উঠিল। আর এখানে বসিয়া দেরি করিলে চলিবে না । বলিল—ন রে কুমম, ওতে আর কি হবে। আমি যাই এখন।