পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 একদিন এই অবস্থায় মন্দির থেকে বাড়ী ফিরে দেখলে তক্ষশিলা থেকে দূত এসেচে রাজ। এ্যাটিআলকিডাসের সেনাপতি এ্যারিওস্টোসের পত্র নিয়ে। পত্র খুলে পড়লে, এক্ষুনি তাকে ফিরে আসতে হবে তক্ষশিলায়। জরুরী দরকার । হেলিওডোরাস বিস্মিত হ’ল । দৃতকে বল্লে—তুমি কিছু জানে ? সে ব্যক্তি বিশেষ কিছু জানে না। কোন গোপনীয় রাজকাৰ্য্য হবে । সেইদিনই হেলিওডোরাস তক্ষশিলায় প্রত্যাবর্তন করলে । সেখানে গিয়ে শুনলে, ব্যাপার গুরুতর বটে। মধ্য-এশিয়া থেকে যুদ্ধদুৰ্ম্মদ শ্বেতকায় হুণদল গান্ধীর আক্রমণ করে ভারতের দিকে অগ্রসর হচ্চে । তাদের অত্যাচারে গান্ধার ও কপিলার বহু গ্রাম জনপদ ধ্বংস হয়েচে, বহু নগরী বিধ্বস্ত হয়েচে । পুরুষপুর, বেণুপত্র, মাত্রাবতী, বলভী প্রভৃতি রাজ্য বিপন্ন । পুরুষপুরের গ্রীকরাজ হিরাক্লিয়াস ও বেণুপত্রের মহাসামন্ত কুজ বিষ্ণুবৰ্দ্ধন তক্ষশিলার সাহায্য প্রার্থনা করেচেন। রাজা সৈন্যদল পাঠাচ্চেন—হেলিওডোরাসকে যেতে হবে যুদ্ধে। হেলিওডোরাস আদেশ পেলে—সেনাপতি এ্যারিওস্টোস ও মহাসামন্ত কুঞ্জ বিষ্ণুবৰ্দ্ধনের অধিনায়কত্বে একদল সৈন্য ‘চন্দ্রভাগা পার হয়ে গান্ধারের দিকে অগ্রসর হচ্চে—ওদের সঙ্গে অবিলম্বে যোগ দিতে হবে । তিন বছর কাটলে । আজ বলভী, কাল অন্যত্র, পরশু কপিল । পৰ্ব্বত, প্রাস্তর, নদী | গান্ধার থেকে পুরুষপুর, পুরুষপুর থেকে গান্ধার। শ্বেতকায় হণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত— অনেকবার তাদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ হ’ল মরুভূমিতে, পৰ্ব্বতের সংকীর্ণ অধিত্যকায়, কত গগুগ্রামের রাজপথে । মানুষ ম’রে পাহাড় হয়ে গেল—যত না যুদ্ধে, তত দুঃখে কষ্টে অনাহারে । হুণের দল রক্তলোলুপ পশুর মত জনপদবাসীদের উপর অত্যাচার করতে লাগলো। রাত্রের আকাশ আলো হয়ে ওঠে দহমান শস্তক্ষেত্রের বা গ্রাম-জনপদের বাসগৃহের রক্ত-অগ্নিশিখায়। মাতুস নৃশংস হত্যার লালসায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেচে । যুধ্যমান সৈন্যবাহিনীর নিৰ্ম্মম রথচক্রতলে শত শত নিরীহ নারী, শিশু, অসহায় বৃদ্ধ পিষ্ট হয়ে মেদরক্তে পথের ধুলি কর্দমাক্ত করে তোলে। সৰ্ব্বগ্রাসী প্রলয়দেব করলে কৃপাণ দু'হাতে বন বন করে ঘোরান—শাণিত খড়েগর ফলকে ফলকে স্বৰ্য্যকিরণ ঠিকরে পড়ে । কপিলার উত্তর ভাগ শ্মশান হয়ে গেল এই তিন বৎসরে । গভীর নিশীথে সেখানে মুণ্ডমালিনী করালিনী কালভৈরবীর রক্তসিক্ত জিহবা লক্লক্ করে অন্ধকারে । শিবাদলের অমঙ্গল চীৎকারে অন্তরাত্মা কাপে । 璽 একটি খণ্ডযুদ্ধে হেলিওডোরাস হুণদের হাতে বন্দী হ’ল। কেন তারা তাকে হত্যা করলে না, সে নিজেই জানে না...অবাক হয়ে গেল সে। পশুচর্মের তাবুতে উটের দুধ ও ছাতু খেয়ে পযুষিত পশুমাংস খেয়ে সে এক মাস অতি কষ্টে কাটালো। প্রতিক্ষণেই মৃত্যুর প্রেতীক্ষা করে—অথচ কেন তাকে ওরা মারে না কে জানে ? একদিন সে গুয়ে আছে তাঁবুতে,