পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Оде о বিভূতি-রচনাবলী অস্ত যাওয়ার সে দৃশ্বের কথা—মঠাবুক পাহাড়ে শালবনের মধ্যের উচু পথ দিয়ে কাঠ-কয়লা মাথায় করে বয়ে নামাচ্চে যে হো মেয়েরা, যাদের মজুরী চার বার দুর্গম পথে ওঠানাম করলে মাত্ৰ সতেরো পয়স, তাদের কথা—গত পূর্ণিমার আগের পূর্ণিমায় বহরাগড়া থেকে কেণ্ডর-দা রিজার্ভ ( বঁাশের ) ফরেস্ট দেখতে যাওয়া ও বগরাচোড়া গ্রামের সেই উড়িয়া ব্রাহ্মণ ও গ্রাম্য স্বর্গ বাউড়ি দেবীর মন্দিরের পাশে স্তুপীকৃত প্রাচীন পাথরের দেব-দেবীর হাত-পা ভাঙা মূর্তিগুলির কথা। বাঘমুণ্ডী পাহাড়ের মাথায় সেদিন দুপুরে আমি, স্ববোধ ও সিন্‌হ সাহেব বসে ছিলাম, শৈলসালুতে বসন্তের পুষ্পিত লতা, পলাশ ও গোলগোলি, নীচের উপত্যকায় অজস্র ঘেটু ফুল । স্থবোধ ঘোষ আরণ্যক পড়ে শোনাচ্ছে সিনহা সাহেবকে, আমি বসে বসে একদৃষ্টি বাঘমুতী শৈলারণ্যের সে স্বন্দর রূপ দৰ্শন করচি, সেই শঙ্খ ও শোভা নদীর কথা ( কি চমৎকার নাম দুটি! শঙ্খ ও শোভা ! )–এই সব কত কি ছবি গত ক’মাসের স্মৃতির ভাড়ার থেকে হাতড়ে বার করে দেখচি মনের চোখে আর চোখ চেয়ে দেখচি বাংলা দেশের যশোর জেলার এক ক্ষুদ্র পল্লীর মাঠে সম্পূর্ণ অন্য এক দৃশ্বের সামনে বসে, সামনে আমার শৈলমালার armpitheatre-এ ঘেরা ভালকী ফরেস্ট নয়, (হঠাৎ মনে পড়লো ভালকী ফরেস্টের মধ্যে আমার আবিষ্কৃত সেই অপূৰ্ব্ব বন্য সরোবর “লিপুদারা”র কথা, সেই উত্তী চুনা পাথরের শৈল-গাজ, সেই নটরাজ শিবের মত দেখতে সাদা গাছটা যার নাম আমি রেখেছিলুম শিববৃক্ষ, সেই লিপুকোচ গ্রামের লোকদের সন্ধ্যার অন্ধকারে বন্ত হস্তীর ভয়ে মশাল জালিয়ে আমাকে ও ফরেস্ট অফিসার মিঃ সিন্‌হাকে আমাদের বনমধ্যস্থ তাঁবুতে পৌঁছে দেওয়া ) এ হোল আসলেওড়া, ষাড়, শিমূল, কেন্ধোবাকা গাছের বন, চারিদিকে ছায়াভর অপরাহ্লে কোকিল-কুজনে চমক ভেঙে যায় যেন, ভাবি এ বাংলা দেশ, বাংলা, চিরকালের বাংলা মা। নতুবা এত বিম্বপুষ্পের স্বগন্ধ কোথায় ? এত পাখীর ডাক কোথায় ? যারা চিরদিন গ্রামে পড়ে থাকে, তারা কি বুঝবে এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মহনীয় রূপ, তাদের মন তো আকুল হয়ে ওঠেনি বাংলার বাশবনের ছায়ায় ঘাটের ধারের মাটির পথে বেড়াবার জন্তে, চোখ পিপাসিত হয়ে ওঠেনি একটু সবুজ বনত্ৰ দেখবার জন্তে ? রাত অনেক হয়েচে । আমি ডায়েরী লিখচি, কল্যাণী পাশে শুয়ে বই পড়চে । অনেক দিন পরে দেশে এসে ও খুব খুশি । আজ বলচে ওবেল, “আমাদের এ বাড়ীটা কেমন ভালো, কেমন ছাদ—না ? সত্যি, বুড়ীটা আমারও ভাল লাগচে । ঘন ছায়াভরা বাগান ও বনে ঘেরা , ঐ বড় বকুল-গাছটার বাল্যদিনের মত জোনাকীর বাক জলচে জানালা দিয়ে দেখচি, বিলৰিলের ডোবায় কটুকটে ব্যাঙ ডাকচে আর বনে ঝোপে কত কি কীটপতঙ্গ যে কুস্বর করচে তার हेब्रख ८नहै । আবার মনে পড়চে সেই কতদূরের শখ ও শোভা নদীর তীর, গভীর নাকটিটাড়ের বনমধ্যস্থ কৃষ্ণ প্রস্তরের সেই গণ্ডশৈল ও আদিম মানবের চিহ্নযুক্ত গুহ, ভালকী জঙ্গলে বন্য বরমকোচ গ্রামের সেই মুণ্ড যুবতীট, ম্বে আমায় বলেছিল—“তুই কি করচিল এ বনে , আমাদেৱ ? ভালো ভালো জায়গা দেখে বেড়াচ্ছিল বুঝি ?” জবিপ্তি এত ভাল বাংলায় বলেনি।