পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু ২৭১
২৭১

পঞ্চম প্রবাহ

 স্বাধীনতা—কি মধুমাখা কথা! স্বাধীন জীবন কি আনন্দময়! স্বাধীন দেশ কি আরামের স্থান! স্বাধীন ভাবের কথাগুলি কর্ণকুহরে প্রবেশ করিলে হৃদয়ের সূক্ষ্ম শিরা পর্যন্ত আনন্দোচ্ছ্বাসে স্ফীত হইয়া উঠে এবং অন্তরে বিবিধ ভাবের উদয় হয়; মহাহর্ষে মন নাচিতে থাকে, না হয় মহাদুঃখে অশুর ফাটিয়া যায়। স্বাধীন মন, স্বাধীন জীবন পরাধীনতা স্বীকার করিতে যেরূপ কষ্ট বোধ করে, আবার অন্যকে অধীনতা স্বীকার করাইতে পারিলে ঐ অন্তরেই তেমনি অসীম আনন্দ অনুভূত হয়। এক পয়ে দুঃখ, অপর পক্ষের সুখ!

 এজিদ স্বরাজ্যে স্বাধীন। সকলেই তাহার আদেশের অধীন। জয়নালকে তিনি হাসি-রহস্যচ্ছলে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “তুই কি করিবি?” জয়নালের মুখে তাহার উত্তরও তিনি শুনিয়াছেন। “ক্রমে বশে আনিয়া, ক্রমে শান্তভার ধরাইয়া, কার্যসিদ্ধির উপায় না করিলে এইক্ষণে কিছুই হইবে না। জয়নালকে প্রাণে মারিয়া, মদিনার সিংহাসনে বসিলে কোন লাভ নাই। জয়নাল নিয়মিতরূপে মদিনার কর দামেস্কে যোগাইলে, দামেস্কসিংহাসনের সহ প্রকারে গৌরব! কিন্তু সিংহশাবককে বশে আনা সহজ কথা নহে। কিছু দিন চেষ্টা করিয়া দেখা কর্ত্তব্য। প্রথমেই নিরাশ হইয়া হোসেন-বংশ একেবারে বিনাশ করিলে বাহাদুরী কি?” এই সকল আশার কুহকে পড়িয়া এজিদ বন্দিগণের প্রতি সুব্যবস্থার অনুমতি করিয়াছিলেন।

 জয়নাল কিসে বশ্যতা স্বীকার করে, কিসে সে প্রভু বলিয়া মান্য করে, কি উপায় করিলে নির্বিঘ্নে মদিনা-রাজ্য করতলস্থ হয়,অধীনতা,দাস কলরেখা জয়নালের সুপ্রশস্ত ললাটে অক্ষরূপে অঙ্কিত হয়,এজিদ এই সকল মহাচিন্তার ভার নিজ মস্তকে লইয়াও কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই। বিনা যুদ্ধে মদিনার সম্রাট হওয়া সহজ কথা নহে! এজিদের মন্তক