পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৭৮

স্ত্রীলোকের এই পণের কথা শুনিয়া যুদ্ধে প্রস্তুত হইলেন। হনুফাও কম ছিলেন না। যাবতীয় আরবীয় বীরকে তিনি জানিতেন। তাঁহারও মনে ইচ্ছা ছিল যে, আলীকে পরাস্ত করিয়া তিনি একজন মহাবীর দাস লাভ করিবেন। ঘটনাক্রমে সুযোগ ও সময় উপস্থিত!—দিন নির্ণয় হইল। রূপের গরিমায় যৌবনের জ্বলন্ত প্রতিভায় বিবি হনুফা আরবের সুবিখ্যাত বীরকেও তুচ্ছজ্ঞানে সমরাঙ্গণে উপস্থিত হইলেন; কিন্তু ঈশ্বরের মহিমায় যুদ্ধে পরাস্ত হইয়া মোহাম্মদীয় ধর্ম্ম গ্রহণপূর্ব্বক মহাবীর অলীকে স্বামীত্বে বরণ করিলেন। হজরত আলী বিবি ফাতেমার ভয়ে একথা মদিনায় কাহারও নিকট প্রকাশ করেন নাই। সময়ে বিবি হনুফার গর্ভে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। আলী সে সময় মহা চিন্তিত হইলেন,—কি করেন? কথাও গোপন থাকে না! বিবি ফাতেমার ভয়ও কম নহে! পুত্রকে গোপনে আনাইয়া একদা তিনি প্রভু মোহাম্মদের পদপ্রান্তে তাহাকে ফেলিয়া দিয়া জোড়হস্তে দণ্ডায়মান হইলেন। প্রভু মোহাম্মদ পুত্রটিকে ক্রোড়ে লইয়া মুখে চুমা দিয়া বলিলেন, “আমি সকলই জানি। আমি ইহার নাম, ইহার মাতার নামের সহিত এবং আমার নামের সহিত যোগ দিয়া রাখিলাম।” বিবি ফাতেমা দেখিলেন যে, একটি অপরিচিত সন্তানকে প্রভু ক্রোড়ে করিয়া বারবার চুমা দিতেছেন। বিবি ফাতেমা ঐ সন্তানটির কথা জিজ্ঞাসা করায় সমুদয় বৃত্তান্ত প্রকাশ পাইল। বিবি ফাতেমা ক্রোধে জ্বলিয়া উঠিয়া পিতাকে এক প্রকার ভৎসনা করিয়াই কহিলেন, “আমার সপত্নীপুত্রকে আপনি স্নেহ করিয়াছেন। আর কোন্ বিবেচনায় আপনার নামের সহিত যোগ করিয়া ইহার নাম রাখিলেন?”

 প্রভু বলিলেন,—ফাতেমা, শান্ত হও! এই মোহাম্মদ হানিফা তোমার কি কি উপকার করিবে, শুন। যে সময় প্রিয়পুত্র হোসেন কারবালার মহাপ্রান্তরে এজিদের আজ্ঞায় সীমার-হস্তে শহীদ হইবে, তৎকালে তোমার বংশে এক জয়নাল আবেদীন ভিন্ন পুরুষপক্ষে আর কেহই থাকিবে না; তোমার আত্মীয়স্বজন, ভগিনী, পুত্রবধুরা এজিদের সৈন্যহস্তে কারবালা হইতে দামেস্কে বন্দীভাবে আসিবে, তাহাদের কষ্টের